বাংলা প্রবাদ । অষ্টম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য WBNOTES.IN ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে বাংলা ব্যাকরণ বইয়ের অন্তর্ভুক্ত বাংলা প্রবাদ । অষ্টম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ প্রদান করা হলো। শিক্ষার্থীরা এই অষ্টম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ অনুশীলনীর প্রশ্নের উত্তর –গুলি সমাধানের মধ্য দিয়ে তাদের পরীক্ষা প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারবে।
বাংলা প্রবাদ । অষ্টম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ :
অতি লোভে তাঁতি নষ্ট (বেশি লোভে ক্ষতি) – অল্প টাকায় অনলাইনে জিনিস কিনে লাভ করতে গিয়ে বিপিনবাবু সব টাকা খোয়ালেন, একেই বলে অতি লোভে তাঁতি নষ্ট।
ধর্মের ঢাক আপনি বাজে (পাপ কখনো চাপা থাকে না) – গরিব ছেলেকে ঠকিয়ে চাকরি নিয়ে এখন জানাজানির পরে মুখ লুকোনোর জায়গা নেই, কথায় আছে না ধর্মের ঢাক আপনি বাজে।
অতি দর্পে হত লঙ্কা (অহংকার পতনের মূল) – দুটো খেলায় জিতে কোচের কতোই না ভাব ছিলো, এখন হারের মালা গলায় ঝুলেছে, এজন্যই বলে অতি দর্পে হত লঙ্কা।
ধর্মের কল বাতাসে নড়ে (অপকর্ম প্রকাশিত হয়ে পড়েই) – কাচের ফুলদানিটা ভেঙে আঠা দিয়ে জোড়া দিয়েছিলে, কিন্তু হাওয়ার বেগে সেটা পড়ে গিয়ে সবই ফাঁস হয়ে গেলো, কথাতে আছে না ধর্মের কল বাতাসে নড়ে।
অতি মেঘে অনাবৃষ্টি (অতি আড়ম্বরে কাজ হয় না) – এতো আয়োজনে পূজা করছে অথচ মনে ভক্তি নেই, এ যেন অতি মেঘে অনাবৃষ্টি।
ধরাকে সরা জ্ঞান করা (সকলকে তুচ্ছ ভাবা) – ক্লাসে প্রথম হয়ে এখন কাউকে পাত্তা দিচ্ছ না, তুমি দেখছি ধরাকে সরা জ্ঞান করছো।
অল্পজলের মাছ (নিতান্তই বোকা) – আমাদের নতুন বড়োবাবু হলেন অল্পজলের মাছ, তার আড়ালে অন্যরা ভালোই কামাই করছে।
ধরি মাছ না ছুঁই পানি (কৌশলে কার্যোদ্ধার) – থানার ছোটবাবু গোপনে খবর নিয়ে হাতে না হাতে চোরকে ধরলেন, এ যেন ধরি মাছ না ছুঁই পানি।
অন্ধকে দর্পণ দেখানো (নির্বোধকে জ্ঞান দান) – পার্থকে বিয়ের পরামর্শ দেওয়া মানে অন্ধকে দর্পণ দেখানো, কখনোই রাজি হয় না।
নাকে তেল দিয়ে ঘুমানো (নিশ্চিত কার্যোদ্ধার) – ক্যাটেরারকে সব রান্না-খাওয়ার দ্বায়িত্ব দিয়ে তিনি নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন।
পাকা ধানে মই দেয়া (বিপুল ক্ষতি করা) – আমি কি তোমার পাকা ধানে মই দিয়েছি যে তুমি আমার বিয়ে দিতে চাইছো।
কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ (কারো সুদিন, কারো দুর্দিন) – চেম্বারে অনেক রোগী দেখে ডাক্তারবাবুর মুখে চওড়া হাসি, এজন্যই বোধয় বলে কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ।
বামন হয়ে চাঁদে হাত (অসম্ভব কিছু পাওয়ার চেষ্টা) – সামান্য টোটোওয়ালার ছেলে হয়ে তুমি বড়োলোকের মেয়েকে বিয়ে করতে চাও, এতো বামন হয়ে চাঁদে হাত।
পর্বতের মুষিক প্রসব (বিপুল উদ্যোগে তুচ্ছ অর্জন) – এতো টাকা চাঁদা তুলে সামান্য ডাল-ভাত খাওয়াচ্ছে, এ যেন পর্বতের মুষিক প্রসব।
বারো মাসে তেরো পার্বণ (উৎসবের আধিক্য) – বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ, একতার পর আরেকটা আসতেই থাকে।
কত ধানে কত চাল (টের পাওয়ানো) – পরের দিন সব পড়া করে না এলে বুঝবে কত ধানে কত চাল।
বরের ঘরে পিসী কনের ঘরে মাসী (উভয় কুল রক্ষা করে চলা) – বাবা-মায়ের ঝগড়ায় ছেলে বরের ঘরে পিসী কনের ঘরে মাসী হয়ে উঠেছে।
খিচুড়ি পাকানো (বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা) – ক্রিকেট দলে ক্যাপ্টেনের বিরুদ্ধে কয়েকজন খিচুরি পাকাচ্ছে।
গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল (পাওয়ার আগে ভোগের আয়োজন) – চাকরীর পরীক্ষা দিয়েই বাড়ি-গাড়ি কেনার পরিকল্পনা করছো, এতো গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল।
বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খাওয়া (ক্ষমতা প্রদর্শন) – পূর্বে জমিদার প্রতাপ বর্মনের নামে বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খেতো।
ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে (অন্যের কষ্ট দেখে আনন্দ প্রকাশ) – অন্যকে ঠকতে দেখে আনন্দ করছো, এমনটা তোমার সাথেও হতে পারে, জাতো তো ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে।
বিনা মেঘে বজ্রপাত (আকস্মিক বিপদ) – পড়তে এসে শুনছি পরীক্ষা দিতে হবে, এ যেনো বিনা মেঘে বজ্রপাত।
বানরের গলায় মুক্তার হার (অপাত্রে উৎকৃষ্ট সামগ্রী দান) – এম.এ পাশ মেয়ের সাথে বিয়ে হলো এক ভবঘুরে অশিক্ষিত লটারি বিক্রেতার, একেই বলে বানরের গলায় মুক্তার হার।
জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ (ছোট বড় যাবতীয় কাজ করা) – বিয়ে বাড়িতে ছোটকাকাকেই জুতো সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ সব কাজ করছেন, ফুল থেকে খাবার সব তার দায়িত্বে।
এমনই আরো কিছু প্রবাদের উদাহরণ নিম্নে প্রদান করা হলো। তাদের অর্থ দেওয়া হলো। বাক্যরচনাগুলি শিক্ষার্থীরা নিজেরা করার প্রচেষ্টা করবে।
ঝোপ বুঝে কোপ মারা (সুযোগমত কাজ করা)
যত দোষ নন্দ ঘোষ (দুর্বলের প্রতি সর্বদা দোষারোপ)
তেলে মাথায় তেল দেয়া (যার আছে তাকে আরো দেয়া)
দুধ কলা দিয়ে সাপ পোষা (শত্রুকে সযত্নে লালন পালন করা)
ধান ভানতে শিবের গীত (অপ্রাসঙ্গিক কথার অবতারণা)
সাপও মরে, লাঠিও না ভাঙ্গে (উভয় কুল রক্ষা)
অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট (বেশি লোক কাজের বিশৃঙ্খলা ঘটায়)
অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী (স্বল্পজ্ঞান নিয়ে বাড়াবাড়ি মূর্খতার পরিচয়)
অশ্বত্থামা হত ইতি গজ (কোনো কথা সম্পূর্ণ পরিষ্কার না করে সত্য গোপন)
ইটটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয় (যেমন কর্ম তেমন ফল)
চকচক করলেই সোনা হয় না (চেহারাতে আসল গুণ ধরা পড়ে না)
চেনা বামুনের পৈতা লাগে না (মানী ব্যক্তির পরিচয়ের প্রয়োজন পড়ে না)
চোরা না শুনে ধর্মের কাহিনী (অসাধুকে উপদেশ দিয়ে সৎ করা যায় না)
ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার (যোগ্যতা বা ক্ষমতাহীনের আড়ম্বর)
দশচক্রে ভগবান ভূত (দশ জনের চক্রান্তে ন্যায়কে অন্যায় করা)
নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা (অকর্মণ্য ব্যক্তি কাজে অসফলতার পর অন্যের দোষ দেয়)
নিজের চরকায় তেল দেয়া (অন্যের কাজে মাথা না ঘামিয়ে নিজের কাজে মনোযোগ দেয়া)
পুরানো চাল ভাতে বাড়ে (অভিজ্ঞতা বা প্রবীণত্বের মূল্য বেশি)
বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে (জীবমাত্রই স্বাভাবিক অবস্থানে সুন্দর)
বিড়ালের ভাগ্যে শিকা ছেঁড়া (ভাগ্যক্রমে বিনা চেষ্টাতে বাঞ্ছিত বস্তু লাভ)
বড়র পিরিতি বালির বাঁধ ক্ষণে হাতে দড়ি ক্ষণেকে চাঁদ (উচ্চস্তরের সঙ্গে সম্বন্ধ ক্ষণস্থায়ী)
যদি হয় সুজন, তেঁতুল পাতায় ন জন (মিলেমিশে কাজ করলে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়)
হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্ৰ মন্ত্ৰী (নির্বোধের পরামর্শে চলা নির্বোধ ব্যক্তি)























