সমাস কাকে বলে । সন্ধি ও সমাসের পার্থক্য । সমাসের শ্রেণিবিভাগ
আমাদের WBNOTES.IN ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে অষ্টম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য সমাস কাকে বলে । সন্ধি ও সমাসের পার্থক্য । সমাসের শ্রেণিবিভাগ আলোচনাটি প্রদান করা হলো। শিক্ষার্থীরা এই আলোচনাগুলি ভালো করে পড়লে বাংলা ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমাস সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারবে।
সমাস কাকে বলে । সন্ধি ও সমাসের পার্থক্য । সমাসের শ্রেণিবিভাগ :
সমাসঃ
পরস্পর সন্নিহিত এবং পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুই বা ততোধিক পদের মিলনকে বলা হয় সমাস। শুধু পাশাপাশি থাকলেই হবে না, যে পদগুলির সমাস হবে তাদের মধ্যে অর্থসম্বন্ধ থাকতে হবে। যেমন-
সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন
রাজার পথ = রাজপথ
বিদ্যার নিমিত্ত আলয় = বিদ্যালয়
সমাসের বিভিন্ন উপাদানঃ
সমাস বিষয়টি ভালো করে আয়ত্ত করতে গেলে এই জিনিসগুলো জানা প্রয়োজন-
১) সমস্যমান পদঃ
যে পদগুলি মিলিত হয়ে সমাসবদ্ধ পদটি গঠন করে তাদেরকে বলা হয় সমস্যমান পদ। সমাসে সাধারণত দুটি পদের মিলন ঘটে। এদের প্রথমটিকে বলা হয় পূর্বপদ এবং পরেরটিকে বলে পরপদ বা উত্তরপদ। এই দুটি পদের মাঝখানে অতিরিক্ত কোনো পদ থাকলে তাকে বলে মধ্যপদ। যেমন-
সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন (এখানে সিংহ ও আসন হল সমস্যমান পদ)
২) সমাসবদ্ধ পদ বা সমস্তপদঃ
সমস্যমান পদগুলি মিলিত হয়ে যে নতুন পদটি গঠন করে তাকে বলা হয় সমাসবদ্ধ পদ বা সমস্তপদ। যেমন-
সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন (এখানে সিংহাসন হল সমাসবদ্ধ পদ)
৩) ব্যাসবাক্যঃ
যে বাক্য দ্বারা সমাসবদ্ধ পদটিকে ব্যাখ্যা করা হয় তাকে ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্য বলে। একটি উদাহরণের সাহায্যে তিনটি বিষয় দেখানো যেতে পারে-
সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন (এখানে ‘সিংহ চিহ্নিত আসন’ হল ব্যাসবাক্য)
সন্ধি ও সমাসের পার্থক্যঃ
প্রথমত, সন্ধিতে বর্ণের সঙ্গে বর্ণের মিলন ঘটে কিন্তু, সমাসে পদের সঙ্গে পদের মিলন হয়।
দ্বিতীয়ত, সন্ধিতে অর্থ-সম্পর্ক বড় কথা নয় কিন্তু সমাসের ক্ষেত্রে অর্থ-সম্পর্কটাই আসল। পরস্পর সন্নিহিত দুটি পদের মধ্যে অর্থ সম্পর্ক না থাকলে সমাস হয় না।
তৃতীয়ত, সন্ধিতে সন্ধিবদ্ধ পদগুলির অর্থ অপরিবর্তিত থাকে কিন্তু, সমাসের ক্ষেত্রে অর্থ পরিবর্তিত হতেও পারে।
চতুর্থত, সন্ধিতে পদের ক্রম বজায় থাকে কিন্তু, সমাসে কখনও কখনও পদের ক্রম পরিবর্তিত হয়।
সমাসের শ্রেণিবিভাগ :
নিম্নে সমাসের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
১) তৎপুরুষ সমাস – রাজপুত্র = রাজার পুত্র
২) কর্মধারয় সমাস – মহারাজা = মহান যে রাজা
৩) দ্বন্দ্ব সমাস – পিতামাতা = পিতা ও মাতা
৪) বহুব্রীহি সমাস – গৌরাঙ্গ = গৌর অঙ্গ যার
৫) দ্বিগু সমাস – পঞ্চবটি = পঞ্চ বটের সমাহার
৬) অব্যয়ীভাব সমাস – উপকূল = কূলের সমীপে
৭) নিত্য সমাস – দেশান্তর = অন্য দেশ
অনেকে বাক্যাশ্রয়ী সমাস এবং অলুক সমাসকে আলাদা শ্রেণিভূক্ত করেছেন। এখন দেখে নেওয়া যাক সমাস নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সমস্যমান পদগুলি কি ভূমিকা পালন করে থাকে। সমাসবদ্ধ পদে সমস্যমান পদগুলির মধ্যে কোনটির অর্থ প্রাধান্য পাচ্ছে তার ভিত্তিতে সমাসের শ্রেণিকরণ হয়ে থাকে। যেমন-
পূর্বপদের প্রাধান্য – অব্যয়ীভাব সমাস
পরপদের প্রাধান্য – কর্মধারয় ও তৎপুরুষ সমাস
উভয় পদের প্রাধান্য – দ্বন্দ্ব সমাস
কোনো পদের প্রাধান্য নেই – বহুব্রীহি সমাস