সাধু ও চলিত । অষ্টম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য WBNOTES.IN ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে বাংলা ব্যাকরণ বইয়ের অন্তর্ভুক্ত সাধু ও চলিত । অষ্টম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ প্রদান করা হলো। শিক্ষার্থীরা এই অষ্টম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ অনুশীলনীর প্রশ্নের উত্তর –গুলি সমাধানের মধ্য দিয়ে তাদের পরীক্ষা প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারবে।
সাধু ও চলিত । অষ্টম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ :
সাধু ভাষাঃ
সাধু ভাষা হলো বাংলা গদ্য সাহিত্যের একটি প্রাচীন এবং আনুষ্ঠানিক রূপ, যেখানে সংস্কৃতের প্রভাব বেশি থাকে এবং তৎসম শব্দ ও ক্রিয়াপদের পূর্ণরূপ ব্যবহার করা হয়। এটি সাধারণত লিখিত রূপে ব্যবহৃত হয় এবং গুরুগম্ভীর ও মার্জিত বৈশিষ্ট্যযুক্ত।
সাধু ভাষারীতির বৈশিষ্ট্যঃ
১) সাধু ভাষার রূপ অপরিবর্তনীয়। অঞ্চলভেদে বা কালক্রমে এর কোনো পরিবর্তন হয় না।
২) এ ভাষারীতি ব্যাকরণের সুনির্ধারিত নিয়ম অনুসরণ করে চলে। এর পদবিন্যাস সুনিয়ন্ত্রিত ও সুনির্দিষ্ট।
৩) সাধু ভাষারীতিতে তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের ব্যবহার বেশি বলে এ ভাষায় এক প্রকার আভিজাত্য ও গাম্ভীর্য আছে।
৪) সাধু ভাষারীতি শুধু লেখায় ব্যবহার হয়। তাই কথাবার্তা, বক্তৃতা, ভাষণ ইত্যাদির উপযোগী নয়।
৫) সাধু ভাষারীতিতে সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের পূর্ণরূপ ব্যবহৃত হয়।
চলিত ভাষাঃ
চলিত ভাষা বলতে ভাগীরথী নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মুখের ভাষার আদলে গড়ে ওঠা সাহিত্যিক গদ্যকে বোঝায়, যা বর্তমানে প্রমিত বা স্বীকৃত কথ্য ভাষা হিসেবে পরিচিত। এই ভাষাটি সাধু ভাষার চেয়ে বেশি প্রাঞ্জল এবং সহজবোধ্য, যা মৌখিক ও লিখিত উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়। প্যারীচাঁদ মিত্র প্রথম এই ভাষারীতি ব্যবহার করেন তার “আলালের ঘরের দুলাল” উপন্যাসে এবং প্রমথ চৌধুরী “সবুজপত্র” পত্রিকার মাধ্যমে এটি সাহিত্যে প্রতিষ্ঠিত করেন।
চলিত ভাষারীতির বৈশিষ্ট্যঃ
১) চলিত ভাষা সর্বজনগ্রাহ্য মার্জিত ও গতিশীল ভাষা। তাই এটি মানুষের কথাবার্তা ও লেখার ভাষা হিসেবে গৃহীত হয়েছে। এটি পরিবর্তনশীল।
২) এ ভাষারীতি ব্যাকরণের প্রাচীন নিয়মকানুন দিয়ে সর্বদা ব্যাখ্যা করা যায় না।
৩) চলিত ভাষারীতিতে অপেক্ষাকৃত সহজ-সরল শব্দের ব্যবহার বেশি বলে এটি বেশ সাবলীল, চটুল ও জীবন্ত। ঘ. বলার ও লেখার ভাষা বলেই এ ভাষা বক্তৃতা, ভাষণ, নাটকের সংলাপ ও সামাজিক আলাপ-আলোচনার জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
৪) চলিত ভাষারীতিতে সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের সংক্ষিপ্তরূপ ব্যবহৃত হয়।
সাধু-চলিত থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তরঃ
১) ক্রিয়াপদের পূর্ণরূপ ব্যবহৃত হয় বাংলা ভাষার কোন্ রূপের মধ্যে ?
উত্তর:- ক্রিয়াপদের পূর্ণরূপ ব্যবহৃত হয় বাংলা ভাষার সাধু রূপের মধ্যে।
২) চলিত ভাষার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য লেখো ?
উত্তর:- চলিত ভাষার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল ক্রিয়াপদের সংক্ষিপ্ত রূপ।
৩) সাধু ভাষার একটি অনুসর্গের উদাহরণ দাও ?
উত্তর:- সাধু ভাষার একটি অনুসর্গ হল কর্তৃক।
৪) বিদ্যাসাগর অনুবাদ গ্রন্থগুলি কোন্ ভাষায় লিখেছেন ?
উত্তর:- বিদ্যাসাগর অনুবাদ গ্রন্থগুলি সাধু ভাষায় লিখেছেন।
৫) ‘সাধু’ ভাষায় ‘সাধু’ শব্দের অর্থ:—
উত্তর:-পণ্ডিত
৬) ‘তাহাদের’ পদটির চলিত রূপ হল:—
উত্তর:- তাদের
৭) ‘উহা’ পদটির চলিত রূপ হল:—
উত্তর:- ওটা
৮) ‘চলিতেছে’ পদটির চলিত রূপ হল:—
উত্তর:- চলছে
৯) ‘ওরা’ পদটির সাধু রূপ হল:—
উত্তর:- উহারা
১০) ‘আপনাদিগের’ পদটির চলিত ভাষার রূপ হল:—
উত্তর:- আপনাদের
১১) চলিত ভাষায় সর্বাধিক দেখতে পাওয়া যায়:—
উত্তর:- ক্রিয়ার সংক্ষিপ্ত রূপ
১২) তদ্ভব শব্দের প্রয়োগ অনেক বেশি লক্ষ করা যায়:—
উত্তর:- চলিত রীতিতে
১৩) চলিত ভাষায় দেখতে পাওয়া যায়:—
উত্তর:- ক্রিয়ার সংক্ষিপ্ত রূপ
১৪) সাধু ও চলিত ভাষা হল:—
উত্তর:- বাংলা লেখ্যভাষা বৈচিত্র্য
১৫) সাধু ভাষায় ক্রিয়াপদ হয়:—
উত্তর:- দীর্ঘ
১৬) ‘যাইতেছে’ ক্রিয়াটির চলিত রূপ হল:—
উত্তর:- যাচ্ছে
১৭) ‘বসে আছে’ ক্রিয়াটির সাধু রূপ হল:—
উত্তর:- বসিয়া আছে
১৮) ‘উহাদের’ পদটির চলিত রূপ হল:—
উত্তর:- ওদের
১৯) ‘দ্বারা’ পদটির সাধু রূপ হল:—
উত্তর:- দিয়ে
২০) ‘যদ্যপি’ শব্দের চলিত রূপ:—
উত্তর:- যদিও
২১) চলিত ভাষায় সংক্ষিপ্ত রূপ যে ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, তা হল:—
উত্তর:- অনুসর্গ
২২) স্বরসংগতি ব্যবহৃত হয়:—
উত্তর:- চলিত ভাষায়
২৩) ক্রিয়াপদ পূর্ণাঙ্গরূপে ব্যবহৃত হয়:—
উত্তর:- সাধু ভাষায়
২৪) ‘আপনাদিগের’-এর চলিত ভাষার রূপটি হলো—
উত্তর:- আপনাদের
২৫) ‘ওদেরকে’-এর সাধু ভাষার রূপটি হলো—
উত্তর:- উহাদিগকে
২৬) সাধু ভাষার একটি প্রধান বৈশিষ্ট হলো—
উত্তর:- সমাসবদ্ধ পদের প্রয়োগ বাহুল্য
২৭) চলিত ভাষায় দেখতে পাওয়া যায়—
উত্তর:- ক্রিয়ার সংক্ষিপ্ত রূপ
২৮) নীচের কোন্ বাক্যটি ব্যাকরণগতভাবে ভুল –
উত্তর:- এখন অন্ধকার হইয়া এসেছে
২৯) বাংলা ভাষার লিখিত কয়টি রূপ দেখতে পাওয়া যায় ও কী কী?
উত্তর:- বাংলা ভাষায় লিখিত দুটি রূপ দেখতে পাওয়া যায়। যথা- ক) সাধু ভাষা খ) চলিত ভাষা।
৩০) পাঠ্যবই থেকে একটি সাধুরীতির দৃষ্টান্তবাক্য খুঁজে নিয়ে লেখো।
উত্তর:- পাঠ্যবই থেকে গৃহিত একটি সাধুরীতির দৃষ্টান্ত—’এই বলিয়া, আরব সেনাপতি, সাদর সম্ভাষণ ও করমর্দন পূর্বক, তাঁহাকে বিদায় দিলেন। তিনি তৎক্ষণাৎ প্রস্থান করিলেন। আরব সেনাপতিও, সূর্যোদয়দর্শনমাত্র, অশ্বারোহণ করিয়া, তদীয় অনুসরণে প্রবৃত্ত হইলেন।
৩১) পাঠ্যবই থেকে একটি চলিতরীতির দৃষ্টান্ত বাক্য খুঁজে নিয়ে লেখো।
উত্তর:- পাঠ্যবই থেকে গৃহীত একটি চলিতরীতির দৃষ্টান্ত—‘ব্যাপারটা খুব সম্ভবত ১৯২৮ সালের শীতকালে ঘটেছিল বছর আর তারিখটা ঠিক-মতন মনে পড়ছে না। শ্বশুরালয় গয়া থেকে ফিরছি। দেহরাদুন এক্সপ্রেস ধরব। সঙ্গে একখানি মধ্যম শ্রেণির রিটার্ন টিকিটের ফিরতি অংশ আছে।
৩২) সাধু আর চলিত রীতির একটি করে বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর:- সাধু ভাষার একটি বৈশিষ্ট্য হল—তৎসম এবং অপ্রচলিত শব্দ ব্যবহারের প্রাবল্য। যেমন—সঞ্চারমান, তরঙ্গ, অশ্বচালনা প্রভৃতি চলিত ভাষার একটি বৈশিষ্ট্য হল—অর্ধতৎসম, তদ্ভব, দেশি এবং বিদেশি শব্দের প্রয়োগ অনেক বেশি।
৩৩) সাধু ও চলিত রীতির একটি মৌলিক প্রভেদ কী?
উত্তর:- সাধু ও চলিত রীতির একটি মৌলিক প্রভেদ হল—সাধুরীতিতে সর্বনামের পূর্ণাঙ্গ রূপ ব্যবহৃত হয় না। যেমন – তাহাদের, কাহাকেও, যাহাদিগের ইত্যাদি।
চলিত ভাষারীতিতে সর্বনামের প্রচলিত সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহৃত হয়। যেমন – তাদের, কাউকে, যাদের প্রভৃতি।
৩৪) ‘ছোটোদের পথের পাঁচালি’ কোন্ রীতিতে লেখা উপন্যাস ?
উত্তর:- সাধু রীতিতে লেখা উপন্যাস।
৩৫) সাধু থেকে চলিত ভাষায় রূপান্তর করোঃ ‘একদা আরব জাতির সহিত মুরদিগের সংগ্রাম হইয়াছিল’।
উত্তর:- একবার আরব জাতির সঙ্গে মুরদের সংগ্রাম হয়েছিল।
৩৬) সাধু থেকে চলিত ভাষায় রূপান্তর করোঃ ‘আরবরা, তাঁহার অনুসরণে বিরত হইলে তিনি স্বপক্ষীয় শিবিরেরে গমন করিতে লাগিলেন’
উত্তর:- আরবেরা তার অনুসরণ করা থামালে তিনি নিজের শিবিরের উদ্দেশ্যে চলতে লাগলেন।
৩৭) সাধু থেকে চলিত ভাষায় রূপান্তর করোঃ ‘বৎসরে দুশো টাকার মাছ বিক্রি হয় বলিয়া জমিদার বেণীবাবু কড়া পাহারায় আটকাইয়া রাখিয়াছেন।’
উত্তর:- বছরে দুশো টাকার মাছ বিক্রি হয় বলে জমিদার বেণীবাবু তা কড়া পাহারায় আটকে রেখেছেন।























