মুঘল সাম্রাজ্য প্রশ্নের উত্তর । সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়
WBNOTES.IN ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের ইতিহাস পাঠ্য বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত মুঘল সাম্রাজ্য প্রশ্নের উত্তর । সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় নিম্নে প্রদান করা হলো। সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এই প্রশ্নের উত্তরগুলো অনুশীলনের মধ্য দিয়ে তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারবে।
মুঘল সাম্রাজ্য প্রশ্নের উত্তর । সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় :
ক) MCQ -ধর্মী প্রশ্নের উত্তরঃ
১) কুতুবউদ্দিনের জামাই ছিলেন – ইলতুৎমিস
২) মহম্মদ ঘুরির সহচর ছিলেন – চারজন
৩) মালিক কাফুর ছিলেন – আলাউদ্দিন খলজির সেনাপতি
৪) লাহোর ও দিল্লির শাসক হলেন – কুতুবউদ্দিন আইবক
৫) তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন – গিয়াসউদ্দিন তুঘলক
৬) খলিফা ছিলেন ইসলাম জগতের – ধর্মগুরু
৭) ‘খুতবা’ কথার অর্থ – বিশেষ ভাষণ
৮) ইসলাম জগতের প্রধান শাসক ছিলেন – খলিফা
৯) বাংলায় স্বাধীন সুলতানি শাসন শেষ হয় – ১৫৩৮ খ্রিস্টাব্দে
১০) দু-বার খলিফার অনুমোদন পান – ফিরোজ শাহ তুঘলক
১১) ইলতুৎমিসের সময় ভারত আক্রমণ করেন – চেঙ্গিজ খাঁ
১২) দিল্লির একমাত্র মহিলা সুলতান ছিলেন – রাজিয়া
১৩) সম্পন্ন মুসলমানদের সম্পদের ওপর আরোপ করা ভাগ কর হল – জাকাত
১৪) ‘সিজদা’ ও ‘পাইবস’ চালু করেন – গিয়াসউদ্দিন বলবন
১৫) ‘খলজি বিপ্লব’ ঘটেছিল – ১২৯০ খ্রিস্টাব্দে
১৬) ইবন বতুতা ছিলেন – মরক্কোর পর্যটক
১৭) ইলিয়াস শাহের সমসাময়িক দিল্লির সুলতান ছিলেন – ফিরোজ শাহ তুঘলক
১৮) মহম্মদ বিন তুঘলক দোয়াব অঞ্চলে যে কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করেন – তকাভি
১৯) দৌলতাবাদ নামকরণ করেন – মহম্মদ বিন তুঘলক
২০) আলাউদ্দিন খলজির আমলে দিল্লিতে বড়ো বাজার ছিল – চারটি
২১) ইবন বতুতার রচনায় ভারতে প্রচলিত ঘোড়ার মাধ্যমে ডাকযোগাযোগ ব্যবস্থাকে বলা হয়েছে – উলাক
২২) বাংলায় হোসেনশাহি বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন – আলাউদ্দিন হোসেন শাহ
২৩) বাজারদর নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘শাহানা-ই-মান্ডি’ ও ‘দেওয়ান-ই-রিয়াসৎ’ নামে রাজকর্মচারী নিয়োগ করেন – আলাউদ্দিন খলজি
২৪) সৈনিকদের থাকার জন্য আলাউদ্দিন যে নতুন শহর তৈরি করেন – সিরি
২৫) বন্দেগান-ই চিহলগানির সদস্য ছিলেন – গিয়াসউদ্দিন বলবন
২৬) বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য একটি দপ্তর খোলেন – ফিরোজ শাহ তুঘলক
২৭) ভারতবর্ষে সুলতানি যুগে ‘দুরবাশ’ যে অর্থে ব্যবহৃত হত – স্বাধীন শাসনের প্রতীক দণ্ড
২৮) বিজয়নগরের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন – কৃষ্ণদেব রায়
২৯) বাহমনি বংশের শ্রেষ্ঠ সুলতান ছিলেন – তাজউদ্দিন ফিরোজ শাহ
৩০) ‘আমুক্তমাল্যদ’ গ্রন্থটি লেখা হয় – তেলুগু ভাষায়
৩১) বাংলায় ইলিয়াসশাহি শাসন প্রতিষ্ঠা করেন – শামসউদ্দিন ইলিয়াস শাহ
৩২) ইলিয়াস শাহের রাজধানী ছিল – পাণ্ডুয়া
৩৩) বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করেন – আলাউদ্দিন খলজি
৩৪) ‘চল্লিশ চক্র’ তৈরি হয় – ইলতুৎমিশের সময়
৩৫) বাংলায় হোসেনশাহি বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন – আলাউদ্দিন হোসেন শাহ
৩৬) আলাউদ্দিন খলজির সেনাপতি ছিলেন – মালিক কাফুর
৩৭) ১৩৪৭ খ্রিস্টাব্দে দাক্ষিণাত্যে বাহমনি রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন – বাহমন শাহ
৩৮) ‘বন্দেগান-ই চিহলগানি’ কথার অর্থ – চল্লিশ জন বান্দা
৩৯) সুলতানি যুগে পায়ে হাঁটা যে ডাকের ব্যবস্থা ছিল তাকে বলা হত – দাওআ
৪০) ‘পাগলা রাজা’ বলা হয় – মহম্মদ বিন তুঘলককে
৪১) মহম্মদ বিন তুঘলকের আমলে দেবগিরির নতুন নাম হয় – দৌলতাবাদ
৪২) তুলুভ বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন – কৃষ্ণদেব রায়
৪৩) বিজয়নগরের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন – কৃষ্ণদেব রায়
৪৪) বাংলায় শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাব ঘটেছিল – হোসেন শাহের আমলে
৪৫) ইলতুৎমিশের মৃত্যু হয়- ১২৩৬ খ্রি.
৪৬) দিল্লিতে সুলতানি শাসন প্রতিষ্ঠা করেন – কুতুবউদ্দিন আইবক
৪৭) যে পোর্তুগিজ পর্যটক রাজা কৃষ্ণদেব রায়ের সময়ে বিজয়নগর রাজ্যে এসেছিলেন – পেজ
৪৮) বিজয়নগর শহরটি ঘেরা ছিল – সাতটি প্রাচীর দিয়ে
৪৯) হোসেন শাহের আমলে বাংলায় আবির্ভাব হয়েছিল – চৈতন্যদেবের
৫০) হোসেন শাহকে যে নামে অভিহিত করা হয়েছে – নৃপতিতিলক
খ) SAQ -ধর্মী প্রশ্নের উত্তরঃ
১) কত খ্রিস্টাব্দে সুলতান মাহমুদ প্রথম ভারতবর্ষ আক্রমণ করে ?
উত্তরঃ ১০০০ খ্রিস্টাব্দে
২) সুলতান মাহমুদ কোথাকার শাসক ছিলেন ?
উত্তরঃ গজনির।
৩) সুলতান মাহমুদের পর কে ভারতবর্ষ আক্রমণ করেন ?
উত্তরঃ মহম্মদ ঘুরি।
৪) কোন্ সুলতান দু-বার খলিফার অনুমোদন পান ?
উত্তরঃ ফিরোজশাহ তুঘলক।
৫) ইসলাম জগতের প্রধান ধর্মগুরু কে ছিলেন ?
উত্তরঃ খলিফা।
৬) দিল্লির কোন্ সুলতান সর্বপ্রথম খলিফার অনুমোদনলাভ করেন ?
উত্তরঃ ইলতুৎমিশ
৭) সুলতান মাহমুদ কতবার ভারতবর্ষ আক্রমণ করেন ?
উত্তরঃ সতেরো বার
৮) সুলতান মাহমুদের সঙ্গে কোন্ ঐতিহাসিক ভারতে আসেন ?
উত্তরঃ অলবিরুনি।
৯) আরবদের পর কারা ভারতবর্ষ আক্রমণ করে ?
উত্তরঃ তুর্কিরা।
১০) তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ কত খ্রিস্টাব্দে সংগটিত হয় ?
উত্তরঃ ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে
১১) কুতুবউদ্দিন আইবক কবে, সুলতানি শাসন প্রতিষ্ঠা করেন ?
উত্তরঃ ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে।
১২) কুতুবউদ্দিনের বংশকে কী বলা হয় ?
উত্তরঃ দাসবংশ বা মামেলুক।
১৩) তাজউদ্দিন ইয়ালদুজ থাকার শাসক ছিলেন ?
উত্তরঃ গজনির।
১৪) ‘খুতবা’ কথাটির অর্থ কী ?
উত্তরঃ ভাষণ
১৫) ‘খিলাত’ শব্দের অর্থ কী ?
উত্তরঃ আনুষ্ঠানিক পোশাক।
১৬) ইলতুৎমিশ কবে খলিফার অনুমোদন পান ?
উত্তরঃ ১২২৯ খ্রিস্টাব্দে।
১৭) কোন সুলতানকে লাখবক্স বলা হত ?
উত্তরঃ কুতুবউদ্দিন আইবককে।
১৮) দিল্লির সুলতানরা কার অনুমোদন প্রার্থনা করতেন ?
উত্তরঃ খলিফা-র
১৯) ‘সুলতান-ই-আজম’ উপাধি কে ধারণ করেন ?
উত্তরঃ ইলতুৎমিশ।
২০) দিল্লির একমাত্র মহিলা সুলতান কে ছিলেন ?
উত্তরঃ রাজিয়া।
২১) ‘তুর্কান-ই-চিহলগানি’ কে গড়ে তোলেন ?
উত্তরঃ ইলতুৎমিশ।
২২) ‘তুর্কান-ই-চিহলগানি’-র অর্থ কী ?
উত্তরঃ চল্লিশজন তুর্কি বা পরিবার
২৩) সিজদা ও পাইবসপ্রথা কে চালু করেন ?
উত্তরঃ গিয়াসউদ্দিন বলবন।
২৪) গঙ্গা ও যমুনার মধ্যবর্তী অঞল কী নামে পরিচিত ?
উত্তরঃ দোয়াব অঞ্চল।
২৫) দিল্লির কোন সুলতান প্রথম দক্ষিণ ভারত অভিযান করেন ?
উত্তরঃ আলাউদ্দিন খলজি।
২৬) খলজি বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন ?
উত্তরঃ জালালউদ্দিন খলজি।
২৭) কে দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তরিত করেছিলেন ?
উত্তরঃ মহম্মদ-বিন-তুঘলক।
২৮) মহম্মদ-বিন-তুঘলক দেবগিরির নতুন নাম কী রাখেন ?
উত্তরঃ দৌলতাবাদ।
২৯) দিল্লির কোন্ সুলতান প্রতীকী তামার মুদ্রা চালু করে ?
উত্তরঃ মহম্মদ-বিন-তুঘলক।
৩০) ভারতের ইতিহাসে কোন্ সুলতান ‘পাগলা রাজা নামে পরিচিত ?
উত্তরঃ মহম্মদ-বিন-তুঘলক।
৩১) তৈমুর লঙ কত খ্রিস্টাব্দে ভারত আক্রমণ করেন ?
উত্তরঃ ১৩৯৮ খ্রিস্টাব্দে।
৩২) একডালা দুর্গ কোথায় অবস্থিত ?
উত্তরঃ বাংলার পান্ডুয়ায়।
৩৩) সৈয়দ বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন ?
উত্তরঃ খিজির খাঁ।
৩৪) বাংলায় হোসেন শাহি বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন ?
উত্তরঃ আলাউদ্দিন হোসেন শাহি।
৩৫) লোদি বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন ?
উত্তরঃ বহলোল লোদি।
৩৬) লোদি বংশের শেষ সুলতান কে ছিলেন ?
উত্তরঃ ইব্রাহিম লোদি।
৩৭) ভারতে কে প্রথম যুদ্ধে রুমি কৌশল ব্যবহার করেছিলেন ?
উত্তরঃ বাবর।
৩৮) পানিপতের প্রথম যুদ্ধে কে পরাজিত হয়েছিলেন ?
উত্তরঃ ইব্রাহিম লোদি।
৩৯) ইলতুৎমিশের রাজত্বকালে মঙ্গাোল আক্রমণকারী কে ছিলেন ?
উত্তরঃ চেঙ্গিজ খান।
৪০) সিরি শহরটি কার সময়কালে তৈরি হয়েছিল ?
উত্তরঃ আলাউদ্দিন খলজির সময়কালে।
৪১) আরবি ভাষায় ‘আলিম’ মানে কী ?
উত্তরঃ আরবি ভাষায় ‘আলিম’ মানে জ্ঞানী।
৪২) ইকতার প্রধান শাসনকর্তাকে কী বলা হত ?
উত্তরঃ ইকতাদার বা মুকতি।
৪৩) জিজিয়া কর কাদের কাছ থেকে আদায় করা হত ?
উত্তরঃ অ-মুসলমান প্রজাদের কাছ থেকে আদায় করা হত।
৪৪) দিল্লির কোন সুলতান প্রথম বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন ?
উত্তরঃ আলাউদ্দিন খলজি
৪৫) দিল্লির কোন্ সুলতান প্রথম রেশন ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিলেন ?
উত্তরঃ আলাউদ্দিন খলজি
৪৬) কোন সুলতান প্রথম বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য একটি দপ্তর খোলেন ?
উত্তরঃ ফিরোজশাহ তুঘলক
৪৭) ‘অল রিহলা’ বা ‘ কিতাব-উর রিহলা কে রচনা করেন ?
উত্তরঃ ইবনবতুতা।
৪৮) ইবনবতুতা কোন দেশের বাসিন্দা ছিলেন ?
উত্তরঃ মরক্কো দেশের তাঞ্জিয়ার।
৩) বেমানান শব্দটি নির্বাচন করোঃ
(ক) ইলতুৎমিশ, রাজিয়া, ইবন বতুতা, বলবন।
উত্তরঃ ইবন বতুতা। (ইবন বতুতা ছিলেন আফ্রিকা থেকে ভারতে আগত একজন পর্যটক আর বাকি তিনজন হলেন দিল্লির সুলতান)
(খ) তাবরহিন্দ, সুনাম, সামানা, ঝিলম।
উত্তরঃ ঝিলম। (ঝিলাম হলো নদীর নাম, আর বাকি তিনটি হলো দুর্গের নাম)
(গ) খরাজ, খামস, জিজিয়া, আমির, জাকাত।
উত্তরঃ আমির। (আমির ছাড়া বাকি গুলি হল নানা রকমের কর)
(ঘ) আহমেদনগর, বিজাপুর, গোলকোণ্ডা, পাঞ্জাব, বিদর।
উত্তরঃ পাঞ্জাব। (পাঞ্জাব হলো একটি প্রদেশ আর বাকিগুলি হল বাহমনী রাজ্য থেকে তৈরি হওয়া অঞ্চল)
(ঙ) বারবোসা, মাহমুদ গাওয়ান, পেজ, নুনিজ।
উত্তরঃ মাহমুদ গাওয়ান। (মামুদ গাওয়ান একজন রাজ্যের মন্ত্রী বাকিরা বিদেশি পর্যটক)
৪) সংক্ষিপ্ত উত্তর দাওঃ
৪.১) দিল্লির সুলতানদের কখন খলিফাদের অনুমোদন দরকার হতো ?
উত্তরঃ ইসলাম ধর্ম অনুসারে প্রধান শাসক একজনই, তিনি হলেন খলিফা। ইসলামের আওতায় যত অঞ্চল ছিল, তার মূল শাসক খলিফা। তিনি মুসলমানদের ধর্মগুরু। দিল্লির সুলতানির উপরেও খলিফারই অধিকার ছিল। যেহেতু মুসলিম সম্প্রদায় এক বিশাল অঞ্চল শাসন করতেন, একজন খলিফার পক্ষে সমস্ত অঞ্চল শাসন করা সম্ভব ছিল না। তাই খলিফার অনুমোদন নিয়ে নানান অঞ্চলে নানান ব্যক্তি শাসন করতেন। ভারতবর্ষের মুসলিম শাসকগণ সুলতান নামে পরিচিত ছিলেন। এমনিতে সুলতানরা খলিফাকে যে খুব মেনে চলতেন তা নয়, তবে মাঝেমধ্যেই সুলতান কে হবে, এই নিয়ে গোলমাল লেগে যেত। তখন প্রকৃত সুলতান কে হবেন তা নিয়ে খলিফার অনুমোদন দরকার হত। খলিফার অনুমোদনের একটা সম্মান ছিল।
৪.২) সুলতান ইলতুৎমিশের সামনে প্রধান তিনটি সমস্যা কী ছিল ?
উত্তরঃ ইলতুৎমিশ যখন দিল্লির সুলতান হন তখন তাঁর সামনে তিনটি সমস্যা দেখা দেয়। এগুলি হল—
(১) বিদ্রোহী শক্তিগুলোকে কীভাবে তিনি দমন করতে পারবেন।
(২) সেই সময় মধ্য এশিয়ার দুর্ধর্ষ মোঙ্গল শক্তি ছিল একটা বড়ো আতঙ্ক, সব দেশের সব রাজশক্তির কাছেই। তিনি কীভাবে এই মোঙ্গল শক্তিকে মোকাবিলা করবেন, তা ছিল ইলতুৎমিশের কাছে একটা বড়ো সমস্যা।
(৩) কীভাবে সুলতানিতে একটা রাজবংশ তৈরি করা যাবে, যাতে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকারী গোলমাল ছাড়াই সিংহাসনে বসতে পারবেন।
৪.৩) কারা ছিল সুলতান রাজিয়ার সমর্থক ? কারা ছিল তাঁর বিরোধী ?
উত্তরঃ ইলতুৎমিশের সার্থক উত্তরাধিকারী ছিলেন সুলতান রাজিয়া। ইলতুৎমিশের সন্তানদের মধ্যে রাজিয়া ছিলেন যোগ্যতম। ইলতুৎমিশের এক ছেলে অল্প কিছুদিনের জন্যে শাসক হলেও শেষ পর্যন্ত রাজিয়াই ইলতুৎমিশের প্রকৃত উত্তরাধিকারী হতে পেরেছিলেন। রাজিয়ার সুলতান হওয়া নিয়ে সমর্থন ছিল সেনাবাহিনী, অভিজাতদের একাংশ ও দিল্লির সাধারণ লোকেদের। তাঁর বিরুদ্ধে ছিলেন ‘তুর্কি’ অভিজাতরা। এছাড়া উলেমা এবং রাজপুত শক্তিও তাঁর শাসনের বিরোধী ছিলেন।
৪.৪) আলাউদ্দিন খলজি কীভাবে মোঙ্গল আক্রমণের মোকাবিলা করেন ?
উত্তরঃ আলাউদ্দিন খলজির সময়ে দিল্লি দুবার মোঙ্গলদের হাতে আক্রান্ত হয়। সুলতান আলাউদ্দিন খলজি বিরাট এক সৈন্যবাহিনী গড়ে তোলেন মোঙ্গলদের প্রতিরোধ করার জন্য। সৈনিকদের থাকবার জন্য সিরি নামে এক নতুন শহর তৈরি করা হয়। সেনাবাহিনীকে রসদ জোগানোর জন্যে দোয়াব অঞ্চলের কৃষকদের ওপর বেশি হারে কর চাপানো হয়। দুর্গনির্মাণ, পন্যসংগ্রহ ও মূল্যনিয়ন্ত্রণ করে সফলভাবে আলাউদ্দিন মোঙ্গল আক্রমণের মোকাবিলা করেন।
৪.৫) ইলিয়াসশাহি এবং হোসেন শাহি আমলে বাংলার সংস্কৃতির পরিচয় দাও।
উত্তরঃ ইলিয়াস শাহি এবং হোসেন শাহির আমলে বাংলার সংস্কৃতির উন্নয়ন হয়েছিল। এই সময়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়। হোসেন শাহের আমলে বাংলা লেখালেখির চর্চা বাড়ে। ইলিয়াসশাহি ও হোসেনশাহি সুলতানরা ছিলেন অন্য ধর্মমত বিষয়েও উদার। সুলতানদের ধর্মীয় উদারতা বাংলায় সব ধর্মের মানুষকে কাছাকাছি আসতে সাহায্য করেছিল। এই সময়েই বাংলায় শ্রীচৈতন্যের নেতৃত্বে ভক্তিবাদের প্রচার শুরু হয়।
৪.৬) আলাউদ্দিনের দাক্ষিণাত্য অভিযানের বিবরণ দাও।
উত্তরঃ আলাউদ্দিন খলজি দিল্লির প্রথম সুলতান যিনি দক্ষিণ ভারতে সুলতানি সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটান। এই অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাঁর সেনাপতি মালিক কাফুর। আলাউদ্দিন খলজির সৈন্যদল সেনাপতি মালিক কাফুরের নেতৃত্বে ১৩০৫ খ্রিস্টাব্দে মাণ্ডু হয়ে দেবগিরি অভিযান করেন। তারপর ১৩১১ খ্রিস্টাব্দে দুবার ওয়ারঙ্গল আক্রমণ করেন এবং জয় করেন। ওই বছরেই আলাউদ্দিন খলজি দ্বারসমুদ্রে সামরিক অভিযান পাঠান। তাঁর দখলে আসে দ্বারসমুদ্র। এরপর একে একে হোয়সল ও কাকতীয় দখল করেন। এরপর তাঁর সৈন্যদল জয় করে তাঞ্জোর। সবশেষে মাদুরাই এবং পাণ্ড্য জয় করে আলাউদ্দিন তাঁর দাক্ষিণাত্য অভিযান শেষ করেন এবং ভারত মহাসাগরের সীমানা অবধি তাঁর রাজ্য বিস্তৃত হয়।
৪.৭) দিল্লির সুলতানদের সঙ্গে তাঁদের অভিজাতদের কেমন সম্বন্ধ ছিল তা লেখো।
উত্তরঃ সুলতানদের সঙ্গে অভিজাতদের সম্পর্ক সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো –
আনুগত্যের সম্পর্ক:
খান, মালিকও আমির এই তিন ভাগে বিভক্ত অভিজাত শ্রেণি সুলতানের দয়ার ওপর নির্ভরশীল ছিল। তাই তারা সুলতানের অনুগত থাকতে বাধ্য হত।
সংঘাতমূলক সম্পর্ক :
অভিজাতদের একাংশের সমর্থন নিয়ে রাজিয়া সিংহাসনে বসেছিলেন। আবার অভিজাতদের বিরোধিতাতেই তাকে সরে যেতে হয়। বলবন সিজদা ও পাইবস প্রথা চালু করে এবং চল্লিশ চক্রের উচ্ছেদ ঘটিয়ে অভিজাতদের দমন করেন। আলাউদ্দিনও অভিজাতদের নিয়ন্ত্রণে রাখতেন।
প্রশাসনিক সম্পর্ক:
মূলত সেনাপতি, প্রাদেশিক শাসক এবং প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মচারী হিসেবে অভিজাত শ্রেণির সঙ্গে সুলতানের এক প্রশাসনিক সম্পর্ক বজায় ছিল।
আত্মীয়তার সম্পর্ক:
বিভিন্ন সম্প্রদায়ভুক্ত অভিজাতদের সঙ্গে সুলতান অনেক সময় বৈবাহিক সূত্রে আত্মীয়তামূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতেন।
বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক:
সাম্রাজ্যে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য অনেক সুলতান অভিজাতদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন বহলুল লোদি আফগানদের সাবেকি রীতি মেনে অন্যান্য আফগান সর্দারদের সঙ্গে আসন ভাগ করে নিয়েছিলেন।
৪.৮) ইকতা কী ? কেন সুলতানরা ইকতা ব্যবস্থা চালু করেছিলেন ?
উত্তরঃ দিল্লির সুলতান সাম্রাজ্যের সীমানা ক্রমশ বৃদ্ধি করেছিলেন। সুলতানরা যেসব রাজ্যের জয় করলেন সেই রাজ্যগুলি হল সুলতানদের এক একটি প্রদেশ। দিল্লি সুলতানির প্রদেশ গুলিকে ইকতা বলা হত।
দিল্লির সুলতানদের ইকতা ব্যবস্থা চালু করার কারণ—
রাজ্যের শাসন পরিচালনাঃ
ইকতার শাসনকর্তাকে বলা হতো ইকতাদার। ইকতাদাররা রাজ্য বা প্রদেশের শাসক। সুলতানরা তাদের দায়িত্ব ইক্তা ধারদের মধ্যে ভাগ করে দিয়ে সাম্রাজ্যের শাসন পরিচালনা করতেন।
রাজস্ব আদায় ও শান্তি বজায় রাখাঃ
ইকদাদাররা তার শাসনাধীন রাজ্যের রাজস্ব আদায় করতেন তিনি নিজের প্রয়োজনীয় অর্থ রেখে বাড়তি রাজস্ব সুলতানকে দিতেন তিনি রাজ্যের শান্তি শৃঙ্খলা দায়িত্ব পালন করতেন।
সেনাবাহিনী পালনঃ
ইকদাদারদের অন্যতম প্রধান কাজ ছিল সামরিক দায়িত্ব পালন করা ইকতাদাররা হলেন সামরিক নেতা। ছোট ইত্যাদিদের শুধুমাত্র সামরিক দায়িত্ব পালন করতে হতো।
৪.৯) আলাউদ্দিন খলজির সময় দিল্লির বাজারদর নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে তোমার মতামত লেখো।
উত্তরঃ সুলতান আলাউদ্দিন খলজির শাসনব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে সামরিক শক্তির উপর নির্ভরশীল ছিল। তার জন্য তিনি এক বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করেন। তিনি সৈন্যদের নগদ অর্থে বেতন দিতেন এবং বেতন ছিল নির্দিষ্ট ও অপরিবর্তিত। ওই নির্দিষ্ট বেতনে যাতে সৈন্যরা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস পেতে পারে তার জন্য বাজারের জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করেন।
রাজকোশের আয় বাড়াতে আলাউদ্দিন খলজি কতকগুলি অর্থনৈতিক সংস্কার করেন।
বাজারের ধরনঃ
আলাউদ্দিন বাজারের সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ঠিক করে দেন। আলাউদ্দিন খলজির আমলে দিল্লিতে চারটি বড়ো বাজার ছিল এইসব বাজারে খাদ্যদ্রব্য, ঘোড়া, কাপড় ইত্যাদি বিক্রি হতো।
বাজারদর তদারকিঃ
বাজারদর তদারকির জন্য ‘শাহানা-ই-মাণ্ডি’ ও ‘দেওয়ান-ই-রিয়াসৎ’ নামে রাজকর্মচারী নিয়োগ করেন।
সরকারি নিয়মাবলীঃ
সুলতানের ঠিক করে দেওয়া দামের থেকে বেশি দাম নিলে বা ক্রেতাকে ওজনে ঠকালে কঠোর শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল।
রেশন ব্যবস্থাঃ
আলাউদ্দিন রেশন ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। প্রয়োজনের সময়ে প্রজাদের সুলতানের পক্ষ থেকে খাদ্যশস্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পরিমাণমতো জোগান দেওয়া হত।
মূল্যায়নঃ
আলাউদ্দিনের বাজারদর নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে বলা যায়-এটি ছিল সে যুগের বিস্ময় ও অভিনব এক প্রচেষ্টা। এর ফলে অসংখ্য সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আলাউদ্দিনের বাজারদর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে সুলতানি যুগের শ্রেষ্ঠ প্রশাসনিক কৃতিত্ব বলা যেতে পারে।