দাঁড়াও কবিতার প্রশ্ন উত্তর । অষ্টম শ্রেণির বাংলা
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য WBNOTES.IN ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে বাংলা পাঠ্যবইয়ের অন্তর্ভুক্ত দাঁড়াও কবিতার প্রশ্ন উত্তর । অষ্টম শ্রেণির বাংলা প্রদান করা হলো। শিক্ষার্থীরা এই অষ্টম শ্রেণির বাংলা অনুশীলনীর প্রশ্নের উত্তর –গুলি সমাধানের মধ্য দিয়ে তাদের পরীক্ষা প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারবে।
দাঁড়াও কবিতার প্রশ্ন উত্তর :
১) ‘দাঁড়াও’ কবিতায় কবি মানুষকে কী কী করতে বলেছেন ?
উঃ কবিতায় মানুষ বড়ো কাঁদছে বলে কবি বলেছেন, পাশাপাশি তিনি এও বলেছেন যে মানুষই ফাঁদ পাতছে।
২) ‘তোমার মতো মনে পড়ছে’- কখন কবির মনে পড়েছে ?
উঃ কবির সকাল থেকে সন্ধে আর রাতের বেলা অর্থাৎ সবসময় মনে পড়ছে।
৩) কবি কী হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে বলেছেন ?
উঃ কবি মানুষকে মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াতে বলেছেন এবং পাখির মতো মানুষের পাশে দাঁড়াতে বলেছেন।
৪) কবি কী কী ভাবে মানুষকে দাঁড়াতে বলেছেন ?
উঃ কবি এসে দাঁড়াতে বলেছেন এবং ভেসে দাঁড়াতে বলেছেন পাশাপাশি তিনি মানুষের পাশে ভালোবেসেও দাঁড়াতে বলেছেন।
৫) মানুষ কীভাবে রয়েছে ?
উঃ মানুষ বড়ো একলা হয়ে পড়েছে, তাই কবি এমন মানুষ চেয়েছেন যে এই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারবে।
৬) মানুষ একলা কেন ?
উঃ ব্যস্ততম জগতে সবাই ছুটছে। কেউ কারো কথা মনে করছে না যারা গতি হারিয়ে ব্যস্ত জগতের এর সাথে তাল মেলাতে পারছে না- তারাই একলা হয়ে পড়ছে।
৭) ‘তোমাকে সেই সকাল থেকে তোমার মতো মনে পড়ছে — তুমি তাহার পাশে দাঁড়াও’- এর অন্তর্হিত অর্থ লেখো।
উঃ কবি সেই প্রকৃত মানুষকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খুঁজে চলেছেন। কবির স্মৃতিতে সেই মানুষ এবং তার মানবিকতার ছোঁয়া এখনও গভীর ছায়া ফেলে রয়েছে। তাকে খুঁজে এনে তাকে জাগ্রত করতে হবে। এখানে তুমি বলতে কবি সেই মানুষের মানবিকতাবোধ ও চেতনাকে বোঝাতে চেয়েছেন। একাকী অসহায় মানুষের পাশে মানবিক ভাবনা নিয়েই দাঁড়াতে হবে। প্রয়োজনে মানুষকে সহমর্মিতা জানাতে হবে এবং সহযোগিতা করতে হবে।
৮) শক্তি চট্টোপাধ্যায় কোথায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ?
উঃ শক্তি চট্টোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগণার বহুভু গ্রামে।
৯) তাঁর লেখা একটি উপন্যাসের নাম লেখো।
উঃ তার লেখা একটি উপন্যাস হলো ‘কুয়োতলা’।
১০) ‘মতো’ শব্দ ব্যবহার করা হয় কখন ? তোমার যুক্তির পক্ষে দুটি উদাহরণ দাও।
উঃ কারোর সাথে তুলনা বোঝাতে ‘মতো’ কথাটি ব্যবহার করা হয়।
যেমন-
ক) তোমার মতো মানুষ হয় না।
খ) তুমি মায়ের মতোই ভালো।
১১) কবি পাখির মতো পাশে দাঁড়াতে বলেছেন কেন ?
উঃ পাখি স্বাধীন সুখ-দুঃখ তার গায়ে লাগে না। তাই পাখির মতো স্বাধীনভাবে, দৃঢ় মনোভাব নিয়ে কবি মানুষের পাশে দাঁড়াতে বলেছেন। পাখির মিষ্টি ডাকে যেমন মন ভরে ওঠে তেমনই দুঃখের দিনে পাশে দাঁড়ানো মানুষের আশ্বাসও যেন মনে আশার সঞ্চার করে।
১২) ‘মানুষই ফাঁদ পাতছে’- কবি কেন একথা বলেছেন ? ‘মানুষ’ শব্দের সঙ্গে ‘ই’ ধ্বনি যোগ করেছেন কেন ? তোমার কী মনে হয় ?
উঃ লোভ মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি তাই মানুষই মানুষকে ঠকায়। ঠকাবার জন্য নানা প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদ পাতে। মানুষের সীমাহীন আকাঙ্খা ও লোভ তার মানসিকতার পরিবর্তন ঘটায়। সে ভুল পথে অন্যকে ঠকিয়ে সুখ ভোগ করতে চায়। তাই কবি বলেছেন মানুষই ফাঁদ পাতে বা ছলচাতুরী করে। পৃথিবীতে দুই ধরনের মানুষ দেখা যায়। একদল বিবেকবান, মনুষ্যত্ববোধসম্পন্ন ও অন্য দল লোভী ও চতুর। তারা সব সময় চাতুরির দ্বারা মানুষকে ঠকিয়ে লাভবান হতে চায়। এই শ্রেণির মানুষকে বোঝাতেই কবি ‘ই’ প্রত্যয়টি যোগ করেছেন বলে আমার মনে হয়।
১৩) ‘তোমার মতো মনে পড়ছে’- এই পক্তির অন্তর্নিহিত অর্থ কী ?
উঃ এই পঙক্তিটি কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘দাঁড়াও’ কবিতাটি থেকে নেওয়া হয়েছে। একজন মানুষ যেমন করে অপর মানুষকে কাছে পেতে চায়, মানুষ যেমন করে তার পাশে অন্যজনকে জানে তেমনটা বোঝাতে উপরের উক্তিটি করা হয়েছে। বর্তমান সমাজের মানবিক অবক্ষয় কবিকে ব্যথিত করে তুলেছে। মানুষের এই দুর্দিনে তাই সবসময় কবি পরিপূর্ণ সহযোগী এক প্রকৃত মানুষের সন্ধান করেছেন। তাই এই সৎ মানুষের কথা কবির মনে পড়েছে।
১৪) ‘এসে দাঁড়াও ভেসে দাঁড়াও এবং ভালোবেসে দাঁড়াও’- এই পত্তিটির বিশেষত্ব কোথায় ? এই ধরনের দুটি বাক্য তুমি তৈরি করো।
উঃ পঙক্তিটিতে একটি কাব্যসৌন্দর্য প্রকাশ করার চেষ্টা রয়েছে। ‘দাঁড়াও’ শব্দটি পর পর তিনবার ব্যবহার করার ফলে এই পঙক্তিটিতে এই শব্দটিই বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। মানুষ অসহায় অবস্থায় রয়েছে তাদের দুঃখ কষ্টের সীমা পরিসীমা নেই। এদের পাশে দাঁড়াতে হবে, যেভাবে পারবে সেইভাবে দাঁড়াতে হবে এটাই মূল কথা। এই অর্থ বোঝাতে কবি উপরের শব্দগুলি ব্যবহার করেছেন। মানুষকে ভালোবেসে তার পাশে দাঁড়ানোটাই মানুষের মানবিক কর্তব্য। কবি সেটাই করতে বলেছেন।
ক) দেশকে ভালোবাসো, দেশের মঙ্গল তোমার মঙ্গল।
খ) দেশ ডুবছে অন্ধকারে দেশের পাশে দাঁড়াও।
গ) মানুষ অন্ধকারের ঘূর্ণিস্রোতে ভেসে যাচ্ছে, যেভাবে পারো ভেসে এসে তাকে সাহায্য করো।
১৫) ‘মানুষ বড়ো কাঁদছে’- কী কারণে কবি এই কথা বলেছেন ?
উঃ আজকের পৃথিবী বড়ো জটিল, বড়ো কঠিন। এত দ্রুত তার পরিবর্তন হচ্ছে যে, মানুষ তাল মেলাতে পারছে না। অভাব, দারিদ্রতা, কর্মহীনতা মানুষের সহজ সরল সামাজিক জীবনের পরিবেশকে বিষিয়ে তুলছে। আধুনিক সভ্যতার নিমর্মতায় মানুষ ক্রমশ বিচ্ছিন্ন ও অসহায় হয়ে পড়ছে। স্বভাবতই এই অসহায় মানুষ একটু সহানুভূতি পাবার আশায় সে ব্যাকুল ও বড়ো দুঃখী। তাই সে কাঁদছে।
১৬) ‘মানুষ বড়ো একলা তুমি তাহার পাশে এসে দাঁড়াও’- পঙতিটিতে তিনবার ব্যবহার করার কারণ কী হতে পারে বলে মনে হয় ?
উঃ কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘দাঁড়াও’ কবিতাটিতে কবি বলতে চেয়েছেন যে নানা শোষণে, দুঃখে কষ্টে মানুষ ক্রমশই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছে। তার দুঃখের কথা শোনার বা সান্ত্বনা দেবার মতো কেউ আর নেই। তাই কবি বলেছেন সেই একাকী মানুষের পাশে দাঁড়ানোটাই আজ সব থেকে বেশি প্রয়োজন।
ক) মানুষ মানুষকে ঠকাবার জন্য ফাঁদ পাতছে ফাঁদে পড়া অসহায় মানুষ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না অর্থাৎ সে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ও একলা হয়ে পড়ছে।
খ) একাকী মানুষ প্রিয়জনকে পাশে পেতে চায়। তা না পেলে আরও বেশি করে হতাশা ও নিঃসঙ্গতায় ভোগে।
গ) মানুষ প্রগতির সাথে পা মেলাতে না পেরে হতভম্ব হয়ে পড়েছে, কি করবে বুঝে উঠতে না পেরে সবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। তাই একলা হয়ে পড়ে সে কাঁদছে।
১৭) কবিতাটির নাম ‘দাঁড়াও’ কতটা সার্থক ? কবিতাটির নাম ‘মানুষ বড়ো কাঁদছে’ হতে পারে কি তোমার উত্তরের ক্ষেত্রে মুক্তি দাও।
উঃ কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় ‘দাঁড়াও’ কবিতাটির ক্ষেত্রে মূল ভাববস্তুকে মনে রেখে একটি ব্যাঞ্জনাধর্মী নামকরণ করেছেন ‘দাঁড়াও’ শব্দের এক অর্থ হয় থমকে দাঁড়াও। কোনো কাজ করা থেকে বিরত হও। এখানে সেই অর্থে ‘দাঁড়াও’ কথা ব্যবহার করা হয়নি। ‘দাঁড়াও’ অর্থে কবি বলতে চেয়েছেন নানা শোষণে দুঃখ কষ্টে জর্জরিত মানুষের কাছে এবং তার পাশে দাঁড়াতে। এই একলা মানুষের পাশে দাঁড়ানো সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই গুরুত্বের কারণেই কবি ‘দাঁড়াও’ শব্দটি কবিতায় তিনবার উচ্চারণ করেছেন। এই অর্থে নামকরণ সার্থক হয়েছে। অন্যদিক দিয়ে বলা চলে গোটা কবিতা জুড়ে মানুষ নানাভাবে অসহায় অবস্থায় পড়ে মধ্যে কেঁদে চলেছে। তাই ‘মানুষ বড়ো কাঁদছে’ এই নামকরণটিও একেবারে অযৌক্তিক হতো না।
১৮) কবি কাকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে অনুরোধ করেছেন বলে তোমার মনে হয় ?
উঃ যে প্রকৃত মানুষ, যার হৃদয় অন্যের জন্য কেঁদে ওঠে, অন্যের সুখে যে সুখী হয় – সেই ধরনের মানসিকতা সম্পন্ন মানুষের কথা কবি বলেছেন। তাদের কাছে কবির অনুরোধ মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য। অসহায় মানুষ বড়ো একলা হয়ে পড়েছে। তার পাশে দাঁড়িয়ে তাকে জীবন যুদ্ধে পথ চলার শিক্ষা দেবে এবং দুঃখে তাদের সান্ত্বনা দেবে। এরকম একজন মানুষকে কবি পাশে দাঁড়াতে বলেছেন।
১৯) কবিতাটি চলিত বাংলায় লেখা শুধু একটি শব্দ সাধু ভাষা। শব্দটি খুঁজে বার করো এবং শব্দটিকে এভাবে ব্যবহার করেছেন কেন কৰি ?
উঃ শব্দটি হলো ‘তাহার’। কবি মানুষকে সম্মান দিতে চেয়েছেন। কেন অসংখ্য মানুষজন অসহায় – এই অসহায়তা বোঝাতে ‘তাহার’ কথাটি কবি ব্যবহার করেছেন।