ফাঁকি গল্পের প্রশ্নের উত্তর
WBNOTES.IN ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ফাঁকি গল্পের প্রশ্নের উত্তর প্রদান করা হলো। শিক্ষার্থীরা এই অনুশীলনীর প্রশ্নের উত্তরগুলি অনুশীলনের মধ্য দিয়ে তাদের পাঠ্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারবে।
ফাঁকি গল্পের প্রশ্নের উত্তর :
১) রাজকিশোর পট্টনায়ক কোন ভাষার লেখক ?
উঃ ওড়িয়া ভাষার লেখক।
২) তাঁর লেখা দুটি গল্পের বইয়ের নাম লেখো।
উঃ তার লেখা দুটি গল্পের বই হল ‘ভড়াঘর এবং ‘তুঠ পাথর’ ‘।
৩) কটক কোন্ নদীর তীরে অবস্থিত? ওড়িশার আরও একটি নদীর নাম লেখো।
উঃ ওড়িশার মহানদীর তীরে অবস্থিত। ওড়িশার একটি নদী হল বৈতরণী।
৪) গোপালের বাবা প্রথমে কেন বাগানে ফুলগাছ লাগাতে চাননি ?
উঃ বাগানের মাটি চাষের উপযুক্ত ছিল না। এছাড়াও সেখানে জল দেবার অসুবিধা ছিল। তাই গোপালের বাবা প্রথমে বাগানে ফুলগাছ লাগাতে চাননি।
৫) আমগাছে কেন ঠেকো দিতে হয়েছিল ?
উঃ বয়সের ভারে আমগাছটি পূর্বদিকে হেলে পড়েছিল। সেজন্যই আমগাছে ঠেকো দিতে হয়েছিল।
৬) গাছটিকে উইয়ে খেয়ে ফেলল কীভাবে ?
উঃ পিঁপড়ে মারার জন্য গাছের গোড়ায় গোপাল ওষুধ প্রয়োগ করেছিল। কিন্তু গাছের পিঁপড়ে ছিল না, উইপোকা ছিল। ফলে উইপোকা গাছটিকে খেয়ে ফেলেছিল।
৭) গল্প অনুসারে কটকের খবরের কাগজে আমগাছটিকে নিয়ে কী সংবাদ বেরিয়েছিল ?
উঃ কটক শহরে প্রচারিত সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল যে অর্ধরাত্রে প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টির ফলে শহরের মধ্যে পুরী ঘাটে আমগাছ উপড়ে পড়ে গিয়েছে। এর দ্বারা বলা যায় যে আমগাছটির মৃত্যু সংবাদ সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল।
৮) ‘একটু জমি খালি রাখা যাক’- প্রস্তাবটি কে দিয়েছিলেন ? কেন তিনি এমন প্রস্তাব দিয়েছিলেন ?
উঃ প্রস্তাবটি দিয়েছিলেন গোপালের বাবা।
তিনি খালি জায়গায় কিছু গাছপালা লাগাবার ইচ্ছা করেছিলেন। সেজন্যই তিনি এমন প্রস্তাব পেশ করেছিলেন।
৯) “গোপাল মুখ তুলে সন্ধিগ্ধভাবে বাবার মুখের দিকে তাকাল”- তার এই সন্দেহের কারণ কী ?
উঃ গোপালের বাবা বাগানে কলম করা একটি গাছ লাগিয়েছিলেন। সেই গাছটি ভালোভাবে নতুন জায়গায় সতেজভাবে হবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করে গোপাল তার বাবার মুখের দিকে তাকিয়েছিল।
১০) “তুই করবি বাগান!”- বাবা কেন এমন মন্তব্য করেন ?
উঃ গোপালের বাবা তার পুত্রের আলস্যের ব্যাপারে সবিশেষ অবগত আছেন। তাই বাগান করার প্রস্তাবে বাবা কিছুটা বিস্মিত হন। সে কোনোদিন নিজের হাতে জল তুলে স্নান পর্যন্ত করেনি । তাই তার বাবা তাকে উপহাস করে এই কথাটি বলেছিলেন।
১১) “গাছটাকে আর দু’হাত ভিতরে লাগালে কত ভালো হতো।”- কোন্ গাছ ? কেন বক্তার এমন মনে হয়েছে ?
উঃ এখানে আমগাছের কথা বলা হয়েছে।
বক্তার এমন মনে হবার অনেকগুলি কারণ আছে। গাছ যখন বড়ো হবে তখন তার ডালপালা বাড়ির পাঁচিল অতিক্রম করে বাইরে চলে যাবে। তখন বাইরের ডালে হওয়া আম পাড়ার ছেলেরা সব পেড়ে নেবে। ফলে বাইরের প্রতিবেশীদের সঙ্গে ঝগড়া হবার সম্ভাবনা বাড়বে।
১২) আমগাছটি কীভাবে গোপালবাবুর বাড়ির নিশানা হয়ে উঠেছিল ?
উঃ আমগাছটি গোপালবাবুর বাড়ির চেনার একটা নিশানা হয়ে উঠেছিল। যখন গোপালবাবুকে কেউ তার বাড়ির ঠিকানা জিজ্ঞাসা করত তখন তিনি তাদের বলতেন কাঠজোড়ি নদীর ধারে, পুরীঘাট পুলিশ ফাঁড়ির পশ্চিমে পাঁচিলের মধ্যে আমগাছ থাকা বাড়িটাই তার ঠিকানা।
১৩) গাছটি কীভাবে তাদের সাহায্য করেছিল বুঝিয়ে লেখো।
উঃ গোপালবাবুর বাড়ির পাহারাদার রূপে আমগাছটি পরিচিত ছিল। যে তার সবুজ পাতার মাধ্যমে গ্রীষ্মের দাবদাহকে প্রতিরোধ করত। কাঠজোড়ি নদীর দিক থেকে ধেয়ে আসার বালির ঝাপটা যে তার দেহ দিয়ে প্রতিরোধ করত। গোপালের সমবয়সী বন্ধুরা সেই আমগাছতলায় বিশ্রাম নিত এবং গাছটির প্রশংসা করত। বিয়েবাড়ি, পুজো এবং অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় আমপাতা বা ডাল নিতে অনেক লোক আসত। সর্বোপরি ওই আমগাছের আম ছিল খুব মিষ্টি; যার গুণগান সকলে করত।
১৪) আমগাছটিকে ঘিরে বাড়ির সকলের অনুভূতির প্রকাশ গল্পে কীভাবে লক্ষ করা যায় ?
উঃ সন্তানস্নেহে গোপালবাবু আমগাছটিকে লালনপালন করেছিলেন। কেউ পাতার জন্য এলে কচিপাতা ভাঙতে নিষেধ করতেন। সকলেরই ভাবনা কবে আমৃগাছে আম হবে। আমগাছে যখন মুকুল এল তখন সকলের চিন্তা যদি কুয়াশার জন্য সব মুকুল ঝরে যায়। পরবর্তীকালে যখন আম ফলল তখন সকলে রোজ গুণে দেখে কতগুলি আম হয়েছে। দুপুরবেলা পালা করে পাহারা দিয়ে সকলে ছেলেদের থেকে আমগুলিকে রক্ষা করে।
এমনিভাবে আমগাছটি বাড়ির প্রতিটি মানুষের আপনজন হয়ে উঠেছিল এবং সকলেই আমগাছটির প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখত।
১৫) “সেই দিন থেকে গাছ হেলে পড়েছে পুবদিকে”- কোন্ দিনের কথা বলা হয়েছে ? গাছটি হেলে পড়ার কারণ কী ?
উঃ আলোচ্য অংশে যুদ্ধের দিনের কথা বলা হয়েছে। তখন দেশে যুদ্ধের আবহাওয়া। শত্রুপক্ষ আকাশপথে উড়োজাহাজ থেকে বোমাবর্ষণ করে এই আশংকায় সরকারের লোকজন আমগাছের গোড়ায় একটা ট্রেঞ কাটে। তার ফলেই গাছটি পূর্বদিকে কিছুটা হেলে পড়েছিল।
১৬) “ঠিক বন্ধুর মতই গাছ সব কথা লুকিয়ে রেখেছে।”- গাছটি কীভাবে গোপালের বন্ধু হয়ে উঠেছিল ? কোন্ সব কথা সে লুকিয়ে রেখেছিল?
উঃ আমগাছটি নানাবিধ উপকার সাধন করত। ফলে সে গোপালের উপকারী বন্ধুরূপে পরিগণিত হয়েছিল এবং গোপালও তার প্রতি অত্যন্ত সদয় ছিল। সময়ের ব্যবধানে আমগাছটি রাস্তার উপর অনেকটা ঝুঁকে পড়েছিল। পথচলতি মানুষজন আমগাছটির ওই অবস্থায় অসুবিধায় পড়ত। তাদের মাথায় আমগাছের ডালপালা লাগত। বৃষ্টি হবার পর পাতার জলে মানুষজনের শরীর ভিজে
যেত।
এইসকল কারণে গোপাল তার মায়ের অজ্ঞাতসারে কয়েকটি ছোটো ছোটো ডাল কেটে বাইরে ফেলে দিয়েছিল। গাছ কিন্তু এই কথা কারও কাছে প্রকাশ করেনি। ডাল কাটার কথা সে লুকিয়ে রেখেছিল নিজের মনে।
১৭) বিভিন্ন ঋতুতে আমগাছটির যে ছবি গল্পে ফুটে উঠেছে তা আলোচনা করো।
উঃ গ্রীষ্মকালে আমগাছটি গরম বাতাস এবং নদীর দিক থেকে আসা বালির ঝড়কে প্রতিরোধ করে। ক্লান্ত পথিকদলকে ছায়া দিয়ে তাদের ক্লান্তি দূর করে। আবার যখন আম পাকে সকলে সেই সুস্বাদু আম খেয়ে তারিফ করে। গ্রীষ্মের পর বর্ষাকালে ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। গাছ নীরবে ঝড়ের দাপট সহ্য করে। আষাঢ় মাসের প্রবল ঝড় তার প্রাণ কেড়ে নেয় কিন্তু মৃত্যুকালেও কারও কোনো ক্ষতিসাধন করেনি। রাতের বেলায় ঝড়ের প্রকোপ যখন তাকে উপড়ে দেয় তখনও সে রাস্তার বিজলি বাতিটিকে অক্ষত রেখে মৃত্যুবরণ করে।
১৮) গাছটি কীভাবে পরিবারের সকলকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল ?
উঃ আষাঢ় মাসের প্রবল ঝড় একদিন নিরীহ আমগাছটিকে শিকড় সহ উপড়ে দিল। দীর্ঘকাল আয়ুক্ষয় হতে হতে সে তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিল। উইপোকার দল তার গোড়ার একটা দিককে খেয়ে পেলেছিল। ফলে নানা দিক থেকেই সে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। রাতের অন্ধকারে কারও ক্ষতিসাধন না করে আমগাছ অজস্র মানুষের স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে ফাঁকি দিয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হল।