তালনবমী গল্পের প্রশ্নের উত্তর । পঞ্চম শ্রেণি বাংলা নোট
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য পাতাবাহার পাঠ্য বই থেকে তালনবমী গল্পের অনুশীলনীর প্রশ্নের উত্তর WBNOTES.IN ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে এখানে প্রদান করা হলো। শিক্ষার্থীরা এই তালনবমী গল্পের প্রশ্নের উত্তর । পঞ্চম শ্রেণি বাংলা নোট সমাধানের মধ্য দিয়ে তাদের পরীক্ষা প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারবে।
তালনবমী গল্পের প্রশ্নের উত্তর :
ক) ‘পথের পাঁচালী’ বইয়ের লেখক কে?
উত্তরঃ ‘পথের পাঁচালী’ বইটির লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
খ) তাঁর লেখা ছোটোদের দুটি বইয়ের নাম লেখো।
উত্তরঃ তাঁর লেখা ছোটোদের দুটি বইয়ের নাম – ‘চাঁদের পাহাড়’ আর ‘তালনবমী’।
গ) কত সালে তাঁকে রবীন্দ্র পুরস্কার প্রদান করা হয়?
উত্তরঃ ১৯৫১ সালে তাঁকে রবীন্দ্র পুরস্কার প্রদান করা হয়।
১) নিম্নের প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ
১.১) কোন্ মাসে তাল পাকে?
উত্তরঃ ভাদ্রমাসে তাল পাকে।
১.২) আউশধান কোন্ ঋতুতে ঘরে ওঠে?
উত্তরঃ আউশ ধান ভাদ্রমাসের শেষে অর্থাৎ বর্ষাকালে ঘরে ওঠে।
১.৩) গ্রামজীবনে পালিত হয়, এমন দুটি ব্রত, পরব বা অনুষ্ঠানের নাম লেখো।
উত্তরঃ গ্রামজীবনে পালিত হয়, এমন দুটি ব্রত হল ভাদু ব্রত ও সেঁজুতি ব্রত।
১.৪) বর্ষাকালে অন্ধকার চলাফেরা করা ভালো হয় কেন?
উত্তরঃ বর্ষাকালে অন্ধকারে চলাফেরা করা ভালো নয়, সাপের ভয় থাকে। এ ছাড়া, কোথায় জল জমে আছে, কোথায় খানাখন্দ আছে অন্ধকারে দেখা যায় না।
১.৫) তাল থেকে তৈরি কোন্ কোন্ খাবার তোমার প্রিয়?
উত্তরঃ তাল থেকে তৈরি তালের বড়া, তালের ক্ষীর, তালপাটালি আমার প্রিয় খাবার।
২) নির্দেশ অনুসারে উত্তর দাওঃ
২.১) এই গল্পটা কোন্ ঋতুর, তা বোঝবার অনেকগুলো সূত্র গল্পটার মধ্যে ছড়ানো আছে। আছে মাসের নাম ব্রতের নাম ইত্যাদি। এ ছাড়াও কোন্ কোন্ সূত্র তুমি খুঁজে পাও লেখো।
উত্তরঃ
‘বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়’ রচিত ‘তালনবমী’ গল্পটিতে বর্ষা ঋতুর কথা বলা হয়েছে। গল্পটিতে বলা আছে ভাদ্র মাসে টানা পনেরোদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। তালনবমী ব্রতের কথাও বলা হয়েছে, যা ভাদ্রমাসে পালিত হয়।
এ ছাড়াও আরও কয়েকটি সূত্র থেকে বোঝা যায় গল্পটিতে বর্ষা ঋতুর কথা বলা হয়েছে। যেমন – ভাদ্রের শেষে আউশ ধান চাষিদের ঘরে তোলার কথা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, জটি পিসিমা নেপাল ও গোপাল দুই ভাইকে সাবধান করেছেন – ‘অন্ধকারে চলাফেরা করা ভালো নয় বর্ষাকালে।’ তৃতীয়ত, লেখক একদিন রাতের বর্ণনায় লিখেছেন, “রাত্রে বৃষ্টি নামে। হু হু বাদলার হাওয়া সেই সঙ্গে।” বৃষ্টির জল জমে মাঠে এক হাঁটু জল আর কাদা হওয়ার কথাও উল্লেখ করেছেন লেখক। চতুর্থত, গোপালকে গনেশ সাবধান করেছে ” বর্ষাকালে ওখানে যেও না একা-একা।”
২.২) এ গল্পে দাদা একসময়ে ছোটো ভাইকে বলেছে, ‘একটা বোকা!’ তোমার কি সত্যি মনে হচ্ছে ভাইটা বোকামিই করেছে? ছোটো ভাই, যার নাম গোপাল, সে যদি তোমার বন্ধু হত, তবে তুমি তাকে কী করতে বলতে?
উত্তরঃ
‘বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়’ রচিত ‘তালনবমী’ গল্পে দাদা নেপাল ভাই গোপালকে একটা বোকা বলেছে। গোপালের মনে হয়েছিল, তাল দিয়ে পয়সা নিলে জটি পিসিমা তাদের নিমন্ত্রণ করবে না। গোপালের চেয়ে দুই বছরের বড়ো এবং সাংসারিক বিষয়ে অভিজ্ঞ নেপাল জানত নিমন্ত্রণ করার হলে জটি পিসিমা এমনই নিমন্ত্রন করবেন, তাল দিয়ে পয়সা নিলেও করবে কিন্তু, গোপালের মন এখনও সরল। সে তার দাদার মতো সাংসারিক অভিজ্ঞ নয়, খিদেয় কষ্ট পেলেও তার সহজ, সরল শিশুমনে এখনও আনন্দ, ভয়, রাগ, দুঃখ, স্বপ্নরা ভিড় করে। তাই, দাদার চোখে গোপাল ‘একটা বোকা’ হলেও, আমরা তার শিশুমনের আবেগপ্রবণতা অনুভব করতে পারি।
ছোটো ভাই, যার নাম গোপাল, সে যদি আমার বন্ধু হত, তবে তাকে আমি বলতাম, সে জটি পিসিমাকে বিনা পয়সায় তাল এনে দিয়ে ঠিক কাজই করেছে। কারণ, অভাব থাকলেও মানুষের জীবনে অর্থই বড়ো কথা নয়। শিশু মনের শিশুসুলভ আবেগ যদি অর্থের কবলে পড়ে, তবে মৃত্যু হয় মনুষ্যত্বের। তাই গোপাল ঠিক কাজই করেছে, তার কাজে উদার মানবিকতার পরিচয় পাওয়া যায়।
২.৩) কী ধরনের বৃষ্টি তোমার পছন্দ এবং কেন তা বুঝিয়ে লেখো।
উত্তরঃ
বর্ষাকালে খুব জোরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হলে আমার খুব ভালো লাগে। বর্ষাকালে এক একটা দিন সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। আকাশ কালো অন্ধকার হয়ে থাকে। বৃষ্টিতে ভিজে গাছের পাতা সবুজ হয়ে থাকে। ব্যাঙেরা ডাকতে থাকে। জমা জলে কাগজের নৌকা ভাসিয়ে দিতে ভারী ভালো লাগে। রাস্তা দিয়ে ছাতা মাথায় দিয়ে মানুষেরা যায়। পাখিরা ভিজে গাছের ডালে বসে থাকে। সাধারণত এরকম দিনে স্কুলে যেতে হয় না। বাড়িতে বসে খিচুড়ি, ইলিশমাছ ভাজা খাওয়া হয়। সব মিলিয়ে এরকম বৃষ্টির দিন আমার খুব ভালো লাগে।
২.৪) গল্পে মোট ক’টি শিশু চরিত্রের কথা আছে? তাদের নাম পরিচয় লিখে তাদের স্বভাব বিষয়ে দুটি করে বাক্য লেখো।
উত্তরঃ
নেপালঃ
ক্ষুদিরাম ভট্চাজের বড়ো ছেলে। বয়স বারো বছর। নেপালের বৈষয়িক বুদ্ধি আছে। তার অভিজ্ঞতাও গোপালের চাইতে বেশি। সে জানত তালনবমীতে তালের বড়া করা হয়। তালের বড়া করতে তাল লাগবে। তাই সে ভেবেছিল তাল কুড়িয়ে এনে জটি পিসিমাকে বিক্রি করে কয়েকটা পয়সা রোজগার করবে।
গোপালঃ
ক্ষুদিরাম ভট্চাজের ছোটো ছেলে। বয়স দশ বছর। সরল ও সাদাসিধে মনের। সে ভেবেছিল বিনা পয়সায় তাল দিলে জটিপিসিমা তালনবমীতে নিমন্ত্রণ করবে। কিন্তু নিমন্ত্রণ না পাওয়ার তার শিশুমনে কষ্ট হয়। অভিমান হয়।
চুনিঃ
শিবু বাঁড়ুজ্যের ছেলে। বয়সে নেপালের চেয়ে বড়ো। অবস্থাপন্ন গৃহস্থের ছেলে, বেশ চেহারা। সরল মনের ছেলে। সমাজের দ্বন্ধবিভেদ সে জানে না। তাই গোপাল যখন তার কাছে জানতে চায়, তাদের জটিপিসিমা নিমন্ত্রণ করবে নাকি, তখন সে শিশুসুলভ সারল্য নিয়ে বলেছিল সবাইকে যখন করেছে গোপালদেরও করবে।
২.৫) ভরা বর্ষার ক্ষুদিরাম ভট্চাজের দিন কীভাবে কাটে?
উত্তরঃ
ক্ষুদিরাম সামান্য আয়ের গৃহস্থ। জমিদার সামান্য কিছু আয় এবং দু-চার ঘর শিষ্যযজমানের বাড়ি ঘুরে ঘুরে কায়ক্লেশে সংসার চলে। বর্ষায় যজমানের বাড়ি থেকে যে-কটি ধান এসেছিল তা ফুরিয়ে গেছে। ভাদ্রের শেষে আউশ ধান চাষিদের ঘরে উঠলে তবে কিছু ধান ঘরে আসবে, তবে তার ছেলেমেয়েরা পেটপুরে খেতে পাবে।
২.৬) চুনির মা জটি পিসিমার বাড়ি গিয়েছিল কেন?
উত্তরঃ
জটি পিসিমার বাড়িতে তালনবমী ব্রত পালন হবে। তার জন্য জটিপিসিমাদের ডাল ভাঙতে চুনির মা জটি পিসিমার বাড়ি গিয়েছিল।
২.৭) জটি পিসিমার বাড়িতে, কী বারে, কেন তালের প্রয়োজন হয়েছিল?
উত্তরঃ
মঙ্গলবার জটিপিসিমার বাড়িতে তালনবমীর ব্রত, তাই তালের প্রয়োজন হয়েছিল।
২.৮) কে, কীভাবে জটি পিসিমাকে তাল জোগাড় করে এনে দিয়েছিল?
উত্তরঃ
গোপাল খুব ভোরবেলা উঠে দিঘির তালপুকুরের বনে ঢুকে তাল জোগাড় করে জটিপিসিমাকে দিয়েছিল।
২.৯) জটি পিসিমার ভালো নামটি কী?
উত্তরঃ
জটি পিসিমার ভালো নাম হরিমতী।
২.১০) বর্ষারাতে গোপালের দেখা স্বপ্ন কীভাবে মিথ্যা হয়ে গেল, তা গল্প অনুসরণে লেখো।
উত্তরঃ
বর্ষারাতে গোপাল স্বপ্ন দেখেছিল জটিপিসিমা ও তার মেয়ে লাবণ্যদি তাকে আদর যত্ন করে খাওয়াচ্ছে। খেজুর গুড়ের পায়েস, তিলপিটুলি, কাঁকুড়ের ডালনা, মুগডাল এইসমস্ত ভালোভালো খাবার সে খাচ্ছে। কিন্তু তার স্বপ্নই থেকে গেল। জটিপিসিমা গোপালকে নিমন্ত্রণই করল না। এইভাবে গোপালের দেখা স্বপ্ন মিথ্যা হয়ে গেল।