আফ্রিকা কবিতার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর
WBNOTES.IN ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে দশম শ্রেণির মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য আফ্রিকা কবিতার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর আলোচনাটি প্রদান করা হলো। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বাংলা আফ্রিকা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর অনুশীলনের মধ্য দিয়ে আফ্রিকা কবিতার পরীক্ষা প্রস্তুতি গ্রহণ করতে সক্ষম হবে।
আফ্রিকা কবিতার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর :
১) ‘নতুন সৃষ্টিকে বারবার করছিলেন বিধ্বস্ত’ – কে নতুন সৃষ্টিকে বারবার বিধ্বস্ত করছিলেন ? তাঁর এমন আচরণের কারণ কী ?
উৎসঃ
বিশ্বকবি ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ রচিত ‘পত্রপুট’ কাব্যগ্রন্থের ১৬ সংখ্যক কবিতা ‘আফ্রিকা’ থেকে প্রশ্নোক্ত অংশটি চয়ন করা হয়েছে।
বিধ্বস্তকারীঃ
এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা, অর্থাৎ ঈশ্বর নতুন সৃষ্টিকে বারবার ধ্বংস করছিলেন।
আচরণের কারণঃ
স্রষ্টা নিজের সৃষ্টিকে অসন্তুষ্ট হয়ে যেমন ধ্বংস করেন, তেমনই আবার তা গড়েও তোলেন। ‘উদ্ভ্রান্ত সেই আদিম যুগে’ আফ্রিকা সৃষ্টির ক্ষেত্রেও স্রষ্টা যেন সেই খেলায় মেতে উঠেছিলেন। মহীসঞ্চরণ তত্ত্বের ব্যাখ্যা অনুযায়ী ভূগাঠনিক প্লেটসমূহের কম্পনে মূল মহাদেশ থেকে আফ্রিকা-সহ বিভিন্ন মহাদেশের আলাদা হয়ে যাওয়ার বিষয়টিকেই কবি পৌরাণিক পরিমন্ডলে ব্যাখ্যা করেছেন।
২) ‘তাঁর সেই অধৈর্যে ঘন-ঘন মাথা নাড়ার দিনে’ – ‘তাঁর’ বলতে কার কথা বোঝানো হয়েছে ? এই ‘ঘন-ঘন মাথা নাড়া’ কথাটির দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে ?
উৎসঃ
বিশ্বকবি ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ রচিত ‘পত্রপুট’ কাব্যগ্রন্থের ১৬ সংখ্যক কবিতা ‘আফ্রিকা’ থেকে প্রশ্নোক্ত অংশটি চয়ন করা হয়েছে।
‘তাঁর’ পরিচয়ঃ
প্রশ্নোক্ত অংশে ‘তাঁর’ বলতে ঈশ্বরের কথা বোঝানো হয়েছে।
‘ঘন-ঘন মাথা নাড়া’ কথাটির অর্থঃ
কবি উদ্ধৃত অংশে বিশ্বসৃষ্টির ভৌগোলিক সত্যের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করেছেন। আলফ্রেড ওয়েগনারের তত্ত্ব অনুসারে, বহুকাল আগে সবগুলি মহাদেশ একত্রে প্যানজিয়া মহাদেশ নামে অবস্থিত ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভূগাঠনিক পাতগুলি নড়াচড়ার ফলে আলাদা হয়ে যায়। এই তত্ত্বের নাম মহীসঞ্চরণ তত্ত্ব। এভাবেই আফ্রিকা মহাদেশেরও সৃষ্টি হয়। কবি তাঁর কাব্যিক ভঙ্গিতে এই ভৌগোলিক সত্যের প্রতিই ইঙ্গিত প্রদান করেছেন।
৩) ‘ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে’ – ‘তোমাকে’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে ? তাকে কে, কোথা থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে ?
উৎসঃ
বিশ্বকবি ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ রচিত ‘পত্রপুট’ কাব্যগ্রন্থের ১৬ সংখ্যক কবিতা ‘আফ্রিকা’ থেকে প্রশ্নোক্ত অংশটি চয়ন করা হয়েছে।
‘তোমাকে’ বলতে যাকে বোঝানো হয়েছেঃ
প্রশ্নোক্ত অংশে ‘তোমাকে’ বলতে আফ্রিকা মহাদেশের কথা বোঝানো হয়েছে।
যে যেখান থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছেঃ
সভ্যতা সৃষ্টির প্রথম পর্যায়ে স্রষ্টা যখন নিজের প্রতি অসন্তোষে নতুন সৃষ্টিকে বারবার বিধ্বস্ত করছিলেন, সেই সময়ে রুদ্র সমুদ্রের বাহু প্রাচী ধরিত্রীর বুক অর্থাৎ পৃথিবীর পূর্বাঞ্চলীয় ভূখণ্ড থেকে আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।
৪) ‘বাঁধলে তোমাকে বনস্পতির নিবিড় পাহারায়’ – কার কথা বলা হয়েছে ? ‘বনস্পতির নিবিড় পাহারা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?
উৎসঃ
বিশ্বকবি ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ রচিত ‘পত্রপুট’ কাব্যগ্রন্থের ১৬ সংখ্যক কবিতা ‘আফ্রিকা’ থেকে প্রশ্নোক্ত অংশটি চয়ন করা হয়েছে।
উদ্দিষ্ট ব্যক্তিঃ
উদ্ধৃত অংশে আফ্রিকা মহাদেশের কথা বলা হয়েছে।
‘বনস্পতির নিবিড় পাহারা’ বলতে যা বোঝানো হয়েছেঃ
আফ্রিকা মহাদেশের এক বিস্তীর্ণ অংশ নিরক্ষীয় অঞ্চল হওয়ার জন্য সেখানে ঘন অরণ্য রয়েছে। সেই ঘন অরণ্য ভেদ করে সূর্যের আলোও সেখানে ঢুকতে পারে না। প্রকৃতি যেন নিবিড়, নিশ্ছিদ্র পাহারায় সারা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে আফ্রিকাকে। এই ভৌগোলিক সত্যকেই রবীন্দ্রনাথ কাব্যিকভাবে তুলে ধরেছেন।
৫) ‘কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে’ – প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ‘কৃপণ আলো’ বলার তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উৎসঃ
বিশ্বকবি ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ রচিত ‘পত্রপুট’ কাব্যগ্রন্থের ১৬ সংখ্যক কবিতা ‘আফ্রিকা’ থেকে প্রশ্নোক্ত অংশটি চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গঃ
আফ্রিকা ভূখণ্ডের উৎপত্তির ইতিহাসটি বর্ণনা করা হয়েছে। ভয়ংকর সমুদ্রের বাহু প্রাচীন পৃথিবীর বুক থেকে আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়ে আলাদা মহাদেশ হিসেবে গড়ে তুলেছিল।
তাৎপর্যঃ
এমন এক ভৌগোলিক অবস্থানে আফ্রিকার জন্ম, যেখানে বেশিরভাগ জায়গাই অরণ্যে ঘেরা। সূর্যের আলো সেই ঘন অরণ্য ভেদ করে সেখানে পৌঁছোতে পারে না। এই কারণেই আফ্রিকাকে কবি ‘কৃপণ আলোর অন্তঃপুর’ বলেছেন।
৬) ‘বিদ্রূপ করছিলে ভীষণকে’ – এখানে কার কথা বলা হয়েছে ? কেন সে ভীষণকে বিদ্রুপ করছিল ?
উৎসঃ
বিশ্বকবি ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ রচিত ‘পত্রপুট’ কাব্যগ্রন্থের ১৬ সংখ্যক কবিতা ‘আফ্রিকা’ থেকে প্রশ্নোক্ত অংশটি চয়ন করা হয়েছে।
যার কথা বলা হয়েছেঃ
উদ্ধৃতাংশে আদিম আফ্রিকা মহাদেশের কথা বলা হয়েছে।
ভীষণকে বিদ্রূপ করার কারণঃ
এক দুর্গম রহস্যময় স্থানে আফ্রিকার জন্ম হয়েছিল। অরণ্যে ঘেরা এই আফ্রিকার চারপাশের প্রকৃতি ছিল আরও দুর্বোধ্য এবং সংকেতপূর্ণ। প্রকৃতির এই দুর্বোধ্য মায়াবী রহস্য আফ্রিকার চেতনাতীত মনে তার জীবনধারা গড়ে তোলার মন্ত্র জুগিয়ে ছিল। আর আফ্রিকা প্রতিকূলতার ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রকৃতির সেই ভয়ংকর রূপকে বিদ্রুপ করছিল। নিজের শঙ্কাকে হার মানাতেই ভীষণের বিরুদ্ধে সেও ভয়ংকর হয়ে উঠেছিল।
৭) ‘আপনাকে উগ্র ক’রে বিভীষিকার প্রচণ্ড মহিমায়’ – প্রসঙ্গটি ব্যাখ্যা করো।
উৎসঃ
বিশ্বকবি ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ রচিত ‘পত্রপুট’ কাব্যগ্রন্থের ১৬ সংখ্যক কবিতা ‘আফ্রিকা’ থেকে প্রশ্নোক্ত অংশটি চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গঃ
সৃষ্টির প্রথমপর্বে আফ্রিকা বাইরের পৃথিবীর কাছে নিজেকে পরিচিত করেছিল তার ভয়ংকর রূপের মধ্য দিয়ে। আফ্রিকার প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাই একসময় তাকে বহিঃশক্তির হাত থেকে রক্ষা করেছিল। তার ঘন অরণ্য ভেদ করে ভেতরে ঢোকার অধিকার সূর্যরশ্মিরও ছিল না। প্রতিকূলতার ছদ্মবেশে আফ্রিকা যেন প্রকৃতির ভয়ংকর রূপকেই বিদ্রুপ করেছিল। নিজের ভয়কে সে জয় করেছিল বিভীষিকাকে আশ্রয় করে।
৮) ‘হায় ছায়াবৃতা’ – কাকে ছায়াবৃতা বলা হয়েছে ? কেন বলা হয়েছে ?
উৎসঃ
বিশ্বকবি ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ রচিত ‘পত্রপুট’ কাব্যগ্রন্থের ১৬ সংখ্যক কবিতা ‘আফ্রিকা’ থেকে প্রশ্নোক্ত অংশটি চয়ন করা হয়েছে।
যাকে ছায়াবৃত্তা বলা হয়েছেঃ
কবি আফ্রিকাকে ‘ছায়াবৃতা’ বলে অভিহিত করেছেন।
ছায়াবৃতা বলার কারণঃ
আফ্রিকা মহাদেশের এক বিস্তীর্ণ অংশ ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্যে ঘেরা। সেখানে সূর্যের আলো পর্যন্ত ঢুকতে পারে না। প্রকৃতি যেন নিজের মতো করে তাকে অন্ধকার মহাদেশ হিসেবে গড়ে তুলেছে। সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে না বলেই আফ্রিকাকে ‘ছায়াবৃতা’ বলা হয়েছে। তার আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে আফ্রিকার নিজস্ব জীবন ও সংস্কৃতি।
৯) ‘অপরিচিত ছিল তোমার মানবরূপ / উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে’ – কার কথা বলা হয়েছে ? মন্তব্যটির তাৎপর্য লেখো।
উৎসঃ
বিশ্বকবি ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ রচিত ‘পত্রপুট’ কাব্যগ্রন্থের ১৬ সংখ্যক কবিতা ‘আফ্রিকা’ থেকে প্রশ্নোক্ত অংশটি চয়ন করা হয়েছে।
যার কথা বলা হয়েছেঃ
আলোচ্য অংশে আফ্রিকার কথা বলা হয়েছে।
মন্তব্যের তাৎপর্যঃ
আদিম অরণ্য আর মরুভূমি পূর্ণ আফ্রিকা এক দীর্ঘ সময় পৃথিবীর সভ্য দেশগুলির থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। উন্নত পৃথিবী মুখ ফিরিয়ে থেকেছে আফ্রিকার থেকে। রবীন্দ্রনাথ তাকে বলেছেন ‘ছায়াবৃতা’। ইতিহাস প্রমাণ করে উনিশ শতকের আগে কোনো ইউরোপীয় শক্তি আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপনের কথা ভাবেনি। আফ্রিকার সম্পদ এবং সংস্কৃতি এভাবেই উপেক্ষিত হয়েছিল সভ্যসমাজের দ্বারা।
১০) ‘এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে, নখ যাদের তীক্ষ্ণ তোমার নেকড়ের চেয়ে’ – কাদের আসার কথা বলা হয়েছে ? মন্তব্যটির দ্বারা কী বোঝাতে চাওয়া হয়েছে ?
উৎসঃ
বিশ্বকবি ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ রচিত ‘পত্রপুট’ কাব্যগ্রন্থের ১৬ সংখ্যক কবিতা ‘আফ্রিকা’ থেকে প্রশ্নোক্ত অংশটি চয়ন করা হয়েছে।
যাদের কথা বলা হয়েছেঃ
প্রশ্নোক্ত অংশে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিদের আফ্রিকায় আগমনের কথা বলা হয়েছে।
মন্তব্যের তাৎপর্যঃ
সাধারণভাবে মনে হয়, আফ্রিকায় যে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন ঘটেছিল তার অত্যাচারী স্বরূপ তুলে ধরাই ছিল কবির লক্ষ্য। তবে এর পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ তাঁর কবিতায় ইতিহাসের ধারাকেও তুলে ধরেছেন। কবি এখানে পঞ্চম শতক থেকে প্রচলিত দাসব্যবস্থার দিকেও ইঙ্গিত করেছেন। ‘এল মানুষ-ধরার দল’-এতে দাসব্যবস্থা ও দাস-মালিকদের অত্যাচারী স্বরূপের দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
১১) ‘এল মানুষ ধরার দল’ – কবি কাদের সম্পর্কে একথা বলেছেন ? তাদের ‘মানুষ ধরার দল’ বলা হয়েছে কেন ?
উৎসঃ
বিশ্বকবি ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ রচিত ‘পত্রপুট’ কাব্যগ্রন্থের ১৬ সংখ্যক কবিতা ‘আফ্রিকা’ থেকে প্রশ্নোক্ত অংশটি চয়ন করা হয়েছে।
কবি যাদের সম্পর্কে একথা বলেছেনঃ
আফ্রিকা আক্রমণকারী ইউরোপীয় দেশগুলির সম্পর্কে কবি মন্তব্যটি করেছেন।
তাদের মানুষ ধরার দল বলার কারণঃ
আফ্রিকা সৃষ্টির প্রথম পর্যায়ে উন্নত ইউরোপীয় দেশগুলি অরণ্যের আদিম অন্ধকারে ঢাকা আফ্রিকা সম্পর্কে উদাসীন ছিল। তারা উপেক্ষা করত এই নবগঠিত মহাদেশকে। কিন্তু ক্রমশই আফ্রিকার প্রাকৃতিক এবং মানবসম্পদে তাদের নজর পড়ল। প্রথমেই তারা আফ্রিকাকে চিহ্নিত করল ক্রীতদাস সংগ্রহের কেন্দ্র হিসেবে। ‘লোহার হাতকড়ি’ নিয়ে তারা এসেছিল আফ্রিকাবাসীদের বন্দি করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তাই তাদের ‘মানুষ ধরার দল’ বলা হয়েছে।
১২) ‘গর্বে যারা অন্ধ তোমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে’ – কারা গর্বে অন্ধ ? অরণ্য সূর্যহারা কেন ?
উৎসঃ
বিশ্বকবি ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর‘ রচিত ‘পত্রপুট’ কাব্যগ্রন্থের ১৬ সংখ্যক কবিতা ‘আফ্রিকা’ থেকে প্রশ্নোক্ত অংশটি চয়ন করা হয়েছে।
যারা গর্বে অন্ধঃ
সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশিক শক্তিদের কথাই এখানে বলা হয়েছে। তারা সভ্যতার গর্বে এবং ক্ষমতার অহংকারে অন্ধ।
অরণ্য সূর্যহারা হওয়ার কারণঃ
আদিম আফ্রিকার ভৌগোলিক অবস্থান ছিল দুর্গম, রহস্যময়। চারিদিকে ঘন বনস্পতি যেন আফ্রিকাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। এতই ঘন অরণ্যভরা স্থানে আফ্রিকার অবস্থান ছিল যে, সূর্যের আলো সেখানে পৌঁছোতে পারত না। চিরছায়ায় ঢাকা আফ্রিকা যেন কালো ঘোমটার নীচে তার মানবরূপকে ঢেকে রেখেছিল। এইজন্যই অরণ্যকে সূর্যহারা বলা হয়েছে।
১৩) ‘সভ্যের বর্বর লোভ / নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষতা’ – এখানে কাদের কথা বলা হয়েছে ? মন্তব্যটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উৎসঃ
বিশ্বকবি ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ রচিত ‘পত্রপুট‘ কাব্যগ্রন্থের ১৬ সংখ্যক কবিতা ‘আফ্রিকা’ থেকে প্রশ্নোক্ত অংশটি চয়ন করা হয়েছে।
উদ্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গঃ
উল্লিখিত অংশে সভ্য ইউরোপীয় রাষ্ট্রশক্তিগুলোর কথা বলা হয়েছে।
মন্তব্যটির তাৎপর্য বিশ্লেষণঃ
অরণ্য আর আদিমতার অন্ধকারে থাকা আফ্রিকায় উনিশ শতক থেকে ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপন শুরু হয়। ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ব্রিটেন, জার্মানি, ইটালি-ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশই আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন করে। উনিশ শতকের শেষে প্রায় গোটা আফ্রিকা ইউরোপের উপনিবেশে পরিণত হয়। আফ্রিকাকে লুণ্ঠন করে সেখানকার আদিম জনজাতিদের শোষণের যে ইতিহাস রচিত হয়, এখানে সেদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
১৪) ‘পঙ্কিল হলো ধূলি তোমার রক্তে অশ্রুতে মিশে’ – সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা লেখো।
উৎসঃ
বিশ্বকবি ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ রচিত ‘পত্রপুট’ কাব্যগ্রন্থের ১৬ সংখ্যক কবিতা ‘আফ্রিকা’ থেকে প্রশ্নোক্ত অংশটি চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গঃ
আফ্রিকার জনগণের ওপর ইউরোপের ঔপনিবেশিক শক্তিদের অমানুষিক অত্যাচারের কথা বলতে গিয়ে কবি আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।
ব্যাখ্যাঃ
সৃষ্টির শুরু থেকেই আফ্রিকা ছিল উপেক্ষিত। কিন্তু ধীরে ধীরে দুর্গম প্রাকৃতিক পরিমণ্ডলে অবস্থিত আফ্রিকার মানুষের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে উদ্যোগী হয় ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি। আফ্রিকার আদিম অধিবাসীরা ক্রীতদাসে পরিণত হয়। শোষণ, অত্যাচার আর অবহেলা হয়ে ওঠে আফ্রিকাবাসীদের ভাগ্যলিপি। কবি মনে করেছেন, অত্যাচারিত আফ্রিকাবাসীর রক্ত আর চোখের জলেই সেখানকার মাটি পঙ্কিল হয়ে উঠেছে।
১৫) ‘চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে’ – কার ইতিহাসকে অপমানিত বলা হয়েছে ? কোন ঘটনাকে কবি ‘চিরচিহ্ন’ বলেছেন ?
উৎসঃ
বিশ্বকবি ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ রচিত ‘পত্রপুট’ কাব্যগ্রন্থের ১৬ সংখ্যক কবিতা ‘আফ্রিকা’ থেকে প্রশ্নোক্ত অংশটি চয়ন করা হয়েছে।
যাদের ইতিহাস অপমানিতঃ
আদিম আফ্রিকার ইতিহাসকে অপমানিত বলা হয়েছে।
‘চিরচিহ্ন’ তাৎপর্যঃ
সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপীয় শক্তিরা আফ্রিকার মানুষকে ক্রীতদাসে পরিণত করেছিল। ক্ষমতালোভী সেই সাম্রাজ্যবাদীর দল নির্মম অত্যাচার চালাত আফ্রিকার আদিম মানুষদের ওপর। সেইসব তথাকথিত সভ্য মানুষদের বর্বরতা আর অমানুষিক অত্যাচারে ক্ষতবিক্ষত হল আফ্রিকার মানুষ। তাদের রক্ত আর চোখের জলে কর্দমার্ক হল আফ্রিকার মাটি। সাম্রাজ্যবাদী দস্যুদের কাঁটা-মারা জুতোর নীচে সেই বীভৎস কাদার পিন্ড চিরচিহ্নরূপে কালোছাপ ফেলে রাখল আফ্রিকার অপমানিত ইতিহাসে।
১৬) ‘সমুদ্রপারে সেই মুহূর্তেই’ – সমুদ্রপারে সেই মুহূর্তে কী ঘটেছিল লেখো।
উৎসঃ
বিশ্বকবি ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ রচিত ‘পত্রপুট’ কাব্যগ্রন্থের ১৬ সংখ্যক কবিতা ‘আফ্রিকা’ থেকে প্রশ্নোক্ত অংশটি চয়ন করা হয়েছে।
সমুদ্রপারে সেই মুহূর্তের ঘটনাঃ
আফ্রিকায় যখন ঔপনিবেশিক শোষণ চলছিল, তখন সমুদ্রপারে ইউরোপীয়দের নিজেদের পাড়ায় পাড়ায় দয়াময় দেবতার নামে মন্দিরে পুজোর ঘণ্টা বাজছিল। শিশুরা মায়ের কোলে খেলছিল। আর সেখানে কবিরা বীণায় সংগীতের সুর তুলে সুন্দরের আরাধনা করছিলেন। সমুদ্রপারের এই দৃশ্যে সভ্যতার বিপরীত দিকই ধরা পড়ে কবির চোখে।
১৭) ‘কবির সংগীতে বেজে উঠেছিল / সুন্দরের আরাধনা’ – এই বেজে ওঠার তাৎপর্য কী ?
উৎসঃ
বিশ্বকবি ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ রচিত ‘পত্রপুট’ কাব্যগ্রন্থের ১৬ সংখ্যক কবিতা ‘আফ্রিকা’ থেকে প্রশ্নোক্ত অংশটি চয়ন করা হয়েছে।
বেজে ওঠার তাৎপর্যঃ
আধুনিক সভ্যতার বিপরীত দিককে রবীন্দ্রনাথ এখানে তুলে ধরেছেন। তথাকথিত সভ্য ইউরোপীয় শক্তিরা আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন করে তীব্র শোষণ চালাত। আফ্রিকানদের পাঠানো হত যুদ্ধক্ষেত্রে, পশুর মতো তাদের নিয়ে কেনাবেচা চলত। একদিকে যখন মনুষ্যত্বের এরকম লাঞ্ছনা, সেই একই সময়ে সভ্য দুনিয়ায় ঈশ্বরের প্রার্থনা চলত। আবার শিশুরা মায়ের কোলে খেলত, কবির সংগীতে বেজে উঠত সুন্দরের আরাধনা। অর্থাৎ জীবন সেখানে থাকত শান্ত ও সুন্দর।
১৮) ‘এসো যুগান্তের কবি’ – যুগান্তের কবিকে কোথায় আসতে বলা হয়েছে ? সেখানে এসে তিনি কী করবেন ?
উৎসঃ
বিশ্বকবি ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ রচিত ‘পত্রপুট’ কাব্যগ্রন্থের ১৬ সংখ্যক কবিতা ‘আফ্রিকা’ থেকে প্রশ্নোক্ত অংশটি চয়ন করা হয়েছে।
যুগান্তের কবি যেখানে আসবেনঃ
যুগান্তের কবিকে আসন্ন সন্ধ্যার শেষ রশ্মিপাতে অপমানিত আফ্রিকার দ্বারে এসে দাঁড়ানোর কথা কবি বলেছেন।
যুগান্তের কবি যা করবেনঃ
আফ্রিকার জনগণের ওপর ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকদের অত্যাচার মানবতার অপমান। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের উচিত এই বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো। যুগান্তের কবি তাঁদেরই প্রতিনিধি। মানহারা আফ্রিকার দ্বারে দাঁড়িয়ে সত্য ও সুন্দরের পূজারি কবিকেও বলতে হবে ‘ক্ষমা করো’। আর সেটাই হবে সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী।
১৯) ‘সেই হোক তোমার সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী’ – মন্তব্যটির প্রসঙ্গ নির্দেশ করো।
উৎসঃ
বিশ্বকবি ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ রচিত ‘পত্রপুট’ কাব্যগ্রন্থের ১৬ সংখ্যক কবিতা ‘আফ্রিকা’ থেকে প্রশ্নোক্ত অংশটি চয়ন করা হয়েছে।
মন্তব্যটির প্রসঙ্গঃ
ইউরোপের রাজনৈতিক অস্থিরতা আর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে স্বাধীনতার চাহিদা-এই দুই-এ মিলে আফ্রিকায় এক পালাবদলের সম্ভাবনা কবির কাছে স্পষ্ট হয়েছিল। তাই কবি এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে যুগান্তের নবীন কবিকে আহ্বান করেছেন অপমানিত আফ্রিকার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনার জন্য। আফ্রিকার এই অপমানের ইতিহাসকে মনে রেখে যুগান্তের কবিকে নতজানু হয়ে ক্ষমা চাইতে বলেছেন। হিংস্র প্রলাপের মধ্যে এই ক্ষমাপ্রার্থনার তাৎপর্য বোঝাতেই কবি মন্তব্যটি করেছেন।
২০) ‘দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে’ – কাকে এই আহ্বান করা হয়েছে ? তাঁর প্রতি কবির এরূপ আহ্বানের কারণ কী ?
উৎসঃ
বিশ্বকবি ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ রচিত ‘পত্রপুট’ কাব্যগ্রন্থের ১৬ সংখ্যক কবিতা ‘আফ্রিকা’ থেকে প্রশ্নোক্ত অংশটি চয়ন করা হয়েছে।
যাকে আহ্বান করা হয়েছেঃ
আলোচ্য কবিতায় যুগান্তের কবিকে এই আহবান জানানো হয়েছে।
কবির এরূপ আহ্বানের কারণঃ
আফ্রিকা অত্যাচারিত হয়েছে ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা। দস্যু-পায়ের কাঁটা-মারা জুতোর তলায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে সেই ভূখণ্ডের মাটি। নিরীহ আফ্রিকাবাসীরা মুখবুজে সহ্য করেছে লাঞ্ছনা। সভ্য মানুষ কখনও ফিরেও তাকায়নি এই মানহারা আফ্রিকার দিকে। যুগান্তের কবি সভ্য মানুষের প্রতিনিধি। তাই মানহারা আফ্রিকার দ্বারে দাঁড়িয়ে সমগ্র সভ্য মানুষের হয়ে তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে। এই কারণেই কবি তাঁকে আহবান জানিয়েছেন।