সংলাপ রচনা । মাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণ
দশম শ্রেণির মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের বাংলা বিষয়ের প্রস্তুতির লক্ষ্যে WWW.WBNOTES.IN ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে সংলাপ রচনা । মাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণ প্রদান করা হলো। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এই সংলাপগুলি তৈরি করে তাদের বাংলা বিষয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষা প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারবে।
সংলাপ রচনা । মাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণ :
১) নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি বিষয়ে দুই বন্ধুর সংলাপ রচনা করো।
শুভ – কিরে সপ্তর্ষি, বাজার থেকে ফিরছিস নাকি?
সপ্তর্ষি – হ্যাঁ।
শুভ – তা বাজারের ব্যাগ এত ফাঁকা ফাঁকা লাগছে কেন?
সপ্তর্ষি – ফাঁকা ফাঁকা লাগবে না? বাজারে সব জিনিসের দর এত বেশি যে, ব্যাগভর্তি বাজার করা আর হবে না। দিনকে দিন দর যেন লাফিয়ে লাফিয়ে উঠছে। মাছ-মাংসের দিকে তাকাতে তো রীতিমতো ভয় করে! সবজি-বাজারে ঢুকেও স্বস্তি নেই। রোজ বাজারে গেলে তুইও বুঝতে পারবি জিনিসপত্রের দাম কীভাবে বাড়ছে।
শুভ – জানি রে জানি। আমাদের বাড়ির বাজার তো আমিই করি। বাজারের অবস্থা এখন আমার ভালো করেই জানা।
সপ্তর্ষি – ও, তাহলে তো ব্যাগ ভর্তি না হওয়ার রহস্যটা তোর জানবারই কথা।
শুভ – জেনেশুনেই তোকে জিজ্ঞেস করেছি। কিন্তু এভাবে যদি জিনিসপত্রের দর বাড়তে থাকে, তাহলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকাটাই তো সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।
সপ্তর্ষি – বিলাসদ্রব্যের দাম বাড়ুক ক্ষতি নেই। বিলাসিতা আমাদের জন্য নয়। কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যদি নাগালের বাইরে চলে যায় তাহলে পরিত্রাণের তো আর কোনো পথ নেই।
শুভ – সত্যিই কোন্ দিকে যাব? চাল, ডাল, আটা, তেল, নুন, আলু, পিঁয়াজ-এইরকম কিছু জিনিস না হলে তো প্রাণধারণ করা অসম্ভব, অথচ এগুলোর দামও নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। মনে আছে ক-দিন আগে পিঁয়াজের দাম কীরকম বেড়েছিল?
সপ্তর্ষি – অন্নের পরেই আসে বস্ত্রের কথা। জামাকাপড়ের দাম কেমন বেড়েছে দেখেছিস?
শুভ – তা আর দেখব না? জামাকাপড়, জুতো, ওষুধ-কোন্টা বাড়ে নি বল্?
সপ্তর্ষি – বই-খাতার দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে তো লেখাপড়া করাও মুশকিল হয়ে পড়বে।
শুভ – ঠিকই বলেছিস।
সপ্তর্ষি – প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম যেভাবে বাড়ছে, ঠিক সেইভাবে মানুষের উপার্জন বাড়ছে না। মুশকিলটা এখানেই বেশি। অথচ সরকার এই ব্যাপারটায় তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না।
শুভ – অনেক সময় দেশের অর্থনৈতিক ব্যাপারটা এমন জটিল হয়ে দাঁড়ায় যে, সরকারও তখন নিরুপায় হয়ে পড়ে।
সপ্তর্ষি – মানলাম। তবু মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ সরকার না করলে আর কে করবে?
শুভ – কিছু অসাধু ব্যবসায়ীও অনেক সময় বাজারে কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়।
সপ্তর্ষি – হ্যাঁ, সে তো আছেই। এই কৌশল তো চিরাচরিত। বেশি মুনাফার লোভে তারা সব করতে পারে।
শুভ – যাক, ওসব জানা কথা নিয়ে বেশি আলোচনা করে লাভ নেই। এখন মূল্যবৃদ্ধির হাত থেকে মুক্তির উপায়ের কথাই বেশি করে ভাবতে হবে।
সপ্তর্ষি – এ প্রসঙ্গে প্রথমেই আবার সেই সরকারের কথা বলতে হয়। মূল্যবৃদ্ধি রোধ করার ক্ষেত্রে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে বেশি।
শুভ – আমাদের কি কিছু করণীয় নেই?
সপ্তর্ষি – নিশ্চয়ই আছে। আমাদের অসুবিধার কথা না জানালে সরকারেরই বা চেতনা হবে কী করে? নানাভাবে মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে হবে। সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
২) সর্বজনীন দুর্গাপূজার ব্যয়বহুল আড়ম্বরের পক্ষে ও বিপক্ষে দুই বন্ধুর কাল্পনিক সংলাপ রচনা করো।
সুদীপ – কোথায় যাচ্ছিস সুশান্ত?
সুশান্ত – আজ থেকে আমাদের সর্বজনীন দুর্গাপুজোর চাঁদা তোলা শুরু হবে। মাওদার বাড়ির সামনে তাই হাজির হতে হবে দশটার মধ্যে।
সুদীপ – তোদের চাঁদা তোলা শুরু মানে তো পাড়ার লোকের হৃৎকম্প শুরু হওয়া। আগের বছরের মতো এবারেও কি বেশি বেশি চাঁদা আদায় করবি?
সুশান্ত – অবশ্যই। বেশি করে চাঁদা না তুললে অত আড়ম্বর করব কী করে?
সুদীপ – এবারেও কি খুব জাঁকজমক হচ্ছে?
সুশান্ত – এবারে আরও বেশি। গতবারে বাজেট ছিল দেড় লাখ, এবারে মিটিং-এ ঠিক হয়েছে দু-লাখ খরচ হবে।
সুদীপ – দু-লাখ!
সুশান্ত – চমকে গেলি যে! দু-লাখ ছাড়া হবে কী করে? প্যান্ডেল হবে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের। প্রতিমাও হবে চোখে পড়ার মতো। তারপরে আছে আলোকসজ্জা, বাজনা এবং আনুষঙ্গিক আরও কত কী! আমাদের তো দু-লাখ মাত্র, কত জায়গায় আরও কত বেশি টাকা খরচ করে।
সুদীপ – কিন্তু এত আড়ম্বর করে পুজো করার কোনো মানে হয় না।
সুশান্ত – কেন-মানে হয় না কেন?
সুদীপ – এই খরচের টাকাটা তো তুলবি আমাদেরই মতো সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। কতজনের কত অসুবিধা হবে বল্ তো?
সুশান্ত – পাড়ায় আড়ম্বর করে পুজো হবে, তার আর্থিক চাপ তো পাড়ার লোককে সহ্য করতেই হবে।
সুদীপ – এরকম ব্যয়বহুল আড়ম্বরের তো কোনো প্রয়োজন নেই। লোকে কষ্ট স্বীকার করে আড়ম্বর চায় না।
সুশান্ত – এটাই লোকের ভুল ধারণা। যেমন-তেমন করে একটা সর্বজনীন দুর্গাপুজো হয়ে যাবে, প্যান্ডেলের বাহার থাকবে না, আলোকসজ্জার চমক থাকবে না, পাঁচ রকমের বাজনা বাজবে না, সেটা কি হয়? সর্বজনীন পুজো মানেই একটা বিশাল ব্যাপার।
সুদীপ – আর বিশাল ব্যাপার মানেই টাকার শ্রাদ্ধ!
সুশান্ত – টাকা ছাড়া হবে কী করে?
সুদীপ – কিন্তু কয়েকটা দিনের জন্য এভাবে এত টাকা খরচ না করে এই টাকায় তো অনেক গঠনমূলক কাজ করা যেতে পারে। শুধু উৎসবের জন্য, আমোদের জন্য এই খরচ অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়।
সুশান্ত – মানুষের জীবনে উৎসবের প্রয়োজন তুই অস্বীকার করতে পারবি?
সুদীপ – উৎসবের প্রয়োজন নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু উৎসবকে যে ব্যয়বহুল হতে হবে, তার তো কোনো যুক্তি নেই। এত আড়ম্বর না করেও উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠা যায়। দুর্গাপুজো ব্যাপারটাই মানুষের কাছে একটা বিশেষ আনন্দ-উৎসবের প্রতীক। সেখানে আড়ম্বর না থাকলেও মানুষ প্রাণের আবেগে মেতে উঠবে।
সুশান্ত – আড়ম্বর থাকলে আরও বেশি করে মাততে পারবে।
সুদীপ – সত্যিই কি পারবে? এই ধর্ যাদেরকে তোদের চাপে পড়ে সাধ্যের বাইরে চাঁদা দিতে হয়, তারা কি কখনো মনেপ্রাণে এই উৎসবকে উৎসব বলে মানতে পারবে? বরং তারা মনে মনে চাইবে, তোদের এই ব্যয়বহুল আড়ম্বরপূর্ণ পুজো চিরতরে বন্ধ হয়ে যাক। তাছাড়া বেশি আড়ম্বরে পুজোর শান্ত পরিবেশ বিঘ্নিতই হয়।
সুশান্ত – তোর কথার মধ্যে কিছুটা যুক্তি আছে ঠিকই, তবে এটাও তো ঠিক পুজোটুজো যেখানে হবে, সেই জায়গাটা বেশ সুন্দর না হলে মানুষের ভক্তি আসবে কেন। লোকে এত খরচ করে ভালো ভালো মন্দির বানায় কেন তবে?নই (৩)
সুদীপ – হ্যাঁ, ওইসব দেবালয়ে মানুষের অর্থদন্ত যতটা প্রকাশ পায়, ভক্তির প্রকাশ ততটা থাকে না। রবীন্দ্রনাথের ‘দীনদান’ কবিতা পড়িস নি?
সুশান্ত – যাই বলিস, বেশ আড়ম্বর করে পুজো না হলে কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে।
সুদীপ – আমার মত কিন্তু পুরোপুরি আলাদা। তুই ব্যাপারটাকে ভালো করে ভেবে দেখছিস না বলেই এমন বলছিস। আমার মনে হয় ভালো করে ভাবলে তোর মতও পাল্টে যাবে।
৩) নারী স্বাধীনতা বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে একটি কাল্পনিক সংলাপ রচনা করো।
অঙ্কিতা – কি রে নন্দিতা কেমন আছিস তুই?
নন্দিতা – ভালো আছি রে। তোর খবর কী বল?
অঙ্কিতা – মাধ্যমিক পাশ করার পর তুই তো উচ্চমাধ্যমিক পড়বি? আমার ভাই এই মাধ্যমিকেই পড়াশুনো থমকে যাবে।
নন্দিতা – দুঃখ করার কিছু নেই। আমারও তো এখন সেই একই অবস্থা। মা-বাবা এখন থেকেই সে কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
অঙ্কিতা – স্বাধীনতা শব্দের অর্থ শুধুমাত্র আকারেই বেড়েছে। নারীর ক্ষেত্রে তা বেশির ভাগ সময় সে সবের কোনো অর্থই নেই।
নন্দিতা – বলতো! এই পড়াশুনা নিয়ে কতটা এগুতে পারি আমরা ।
অঙ্কিতা – আমাদের বাবা-মাদের বোঝাতেই হবে। আর তাদের মাথা থেকে সরাতে হবে তাড়াতাড়ি মেয়েদের বিবাহ দেওয়ার চিন্তা ভাবনা।
নন্দিতা – মনে নেই আবার, সে সব কথা মনের মধ্যে গেঁথে আছে। সত্যিকারের নারী স্বাধীনতার হদিস তো ওখানেই পেয়েছিলাম।
অঙ্কিতা – আর্থিক স্বাধীনতা ছাড়া নারী স্বাধীনতার কোনো অর্থই হয় না। অতএব এবার আমাদের শপথ নিতে হবে, যেমন করেই হোক পড়াশুনোটা আমাদের চালিয়ে যেতে হবে।
নন্দিতা – হ্যাঁ, তুই একদম ঠিক বলেছিস। আচ্ছা আজ তবে চলি।
অঙ্কিতা – ঠিক আছে রে। আমিও এবারে বাড়ি যাবো। ভালো থাকিস ভাই।
৪) মাধ্যমিকের পর কী বিষয় নিয়ে পড়বে এ বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে একটি কাল্পনিক সংলাপ রচনা করো।
বিভাস – কী রে পরেশ, এইতো মাধ্যমিক পরীক্ষা দিলি, বই-খাতা নিয়ে কোথায় চললি?
পরেশ – টিউশনে যাচ্ছি। অঙ্কটা পড়তে শুরু করলাম।
বিভাস – ও,তার মানে তুই সাইন্স নিয়ে পড়বি ?
পরেশ – হ্যাঁ, আমি যেহেতু ডাক্তার হতে চাই তাই সায়েন্স নিয়েই পড়তে হবে। তুই কী নিয়ে পড়তে চাস?
বিভাস – আমি আর্টস নিয়ে পড়বো। তুই তো জানিস আমার ইতিহাস পড়তে খুব ভালো লাগে।
পরেশ – তাছাড়া তুই তো শিক্ষকতা করতে চাস? স্কুল টিচার না কলেজের অধ্যাপক কী হতে চাস?
বিভাস – ইতিহাস অনার্স এবং মাস্টার ডিগ্রি করার ইচ্ছে আছে। তারপর এসএসসি ,সিএসসি দুটোই দেব। যেকোনো একটা পেলেই হবে।
পরেশ – ঠিক আছে ,এই নিয়ে পরে কথা হবে এখন পড়ে আসি।
বিভাস – হ্যাঁ, আয়। পরে কথা হবে।
৫) মাধ্যমিকের পর কী বিষয় নিয়ে পড়বে এ বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে একটি কাল্পনিক সংলাপ রচনা করো।
বিভাস – কী রে পরেশ, এইতো মাধ্যমিক পরীক্ষা দিলি, বই-খাতা নিয়ে কোথায় চললি?
পরেশ – টিউশনে যাচ্ছি। অঙ্কটা পড়তে শুরু করলাম।
বিভাস – ও,তার মানে তুই সাইন্স নিয়ে পড়বি ?
পরেশ – হ্যাঁ, আমি যেহেতু ডাক্তার হতে চাই তাই সায়েন্স নিয়েই পড়তে হবে। তুই কী নিয়ে পড়তে চাস?
বিভাস – আমি আর্টস নিয়ে পড়বো। তুই তো জানিস আমার ইতিহাস পড়তে খুব ভালো লাগে।
পরেশ – তাছাড়া তুই তো শিক্ষকতা করতে চাস? স্কুল টিচার না কলেজের অধ্যাপক কী হতে চাস?
বিভাস – ইতিহাস অনার্স এবং মাস্টার ডিগ্রি করার ইচ্ছে আছে। তারপর এসএসসি ,সিএসসি দুটোই দেব। যেকোনো একটা পেলেই হবে।
পরেশ – আচ্ছা, আজ চলি রে। অন্যদিন কথা হবে।
বিভাস – হ্যাঁ, আয়। আমিও এখন বাড়ি যাবো।























