হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধের বড়ো প্রশ্নের উত্তর
WBNOTES.IN ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে দশম শ্রেণির মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধের বড়ো প্রশ্নের উত্তর আলোচনাটি প্রদান করা হলো। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বাংলা হারিয়ে যাওয়া কালি কলম বড়ো প্রশ্নের উত্তর অনুশীলনের মধ্য দিয়ে হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধের পরীক্ষা প্রস্তুতি গ্রহণ করতে সক্ষম হবে।
হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধের বড়ো প্রশ্নের উত্তর :
১) ক্যালিগ্রাফিস্ট কাদের বলা হয় ? প্রবন্ধ অনুসরণে তাদের খাতির বা সন্মানের কথা আলোচনা করো। ১+৪
উৎসঃ
বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক “নিখিল সরকার”, “শ্রীপান্থ” ছদ্মনামে তাঁর “কালি কলম মন” প্রবন্ধগ্রন্থের “হারিয়ে যাওয়া কালি কলম” প্রবন্ধটি রচনা করেছেন। এই প্রবন্ধে আমরা ক্যালিগ্রাফিস্ট বা লিপিকুশলী শব্দের পরিচয় লাভ করি।
ক্যালিগ্রাফিস্টঃ
ক্যালিগ্রাফিস্ট শব্দের বাংলা অর্থ হল লিপিকুশলী। যাদের হাতের লেখা অত্যন্ত সুন্দর ও যারা লেখার বিষয়ে বিশেষ দক্ষ তাঁদের ক্যালিগ্রাফিস্ট বা লিপিকুশলী বলা হয়ে থাকে। প্রাবন্ধিক আলোচ্য প্রবন্ধে ওস্তাদ কলমবাজদের আলোচনা প্রসঙ্গে এই তাৎপর্যপূর্ণ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
তাদের খাতির বা সন্মানের কথাঃ
আলোচ্য পাঠ্যে আমরা জানতে পারি যে এককালে লিপিকুশলীদের খ্যাতি বা সন্মান ছিল অপরিসীম। মোঘল দরবারে তাঁদের ছিল বিশেষ কদর। শুধুমাত্র মুঘল শাসনেই নয়, বিশ্বের দরবারে তাদের সন্মান প্রদান করা হতো। বাংলার শাসকগণও লিপিকুশলীদের জন্য তাদের রাজসভায় বিশেষ মর্যাদা প্রদান করতেন। তাদের পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে লিপিশিল্পে তাদের উৎসাহিত করা হতো। তখনকার দিনে ক্যালিগ্রাফিস্ট বা লিপিকুশলীরা তাঁদের হস্তশিল্পের জাদুতে অনেক মৌলিক এবং অনুবাদ কর্মকে সৌন্দর্য প্রদান করেছেন। এমনকি সাধারণ গৃহস্থরাও লিপিকুশলীদের নিজ বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়ে বিবিধ পুথি নকল করাতেন। সেই সকল পুথির কারুকার্য দেখে এখনও আমরা বিস্মিত হয়ে যাই। সেই লেখাগুলির সব অক্ষর ছিল সমান এবং প্রতিটি ছত্র ছিল সুশৃঙ্খল ও পরিচ্ছন্ন। প্রাবন্ধিকের বর্ণনায় তাই আমরা পাই- “সমানি সম শীর্ষাণি ঘনানি বিরলানি চ।” এক কথায় ক্যালিগ্রাফিস্ট বা লিপিকুশলীদের ছিল “মুক্তোর মত হস্তাক্ষর।”
তবে তারা তাদের প্রতিভার সমকক্ষ উপার্জন করতে পারতেন না বলেই প্রাবন্ধিক উল্লেখ করেছেন। চারখন্ড রামায়ণ কপি করে অষ্টাদশ শতকে একজন লিপিশিল্পী পেয়েছিলেন- “নগদ সাত টাকা, কিছু কাপড় আর মিঠাই।” এক সাহেবের বিবরণানুসারে উনিশ শতকে বারো আনার বিনিময়ে বত্রিশ হাজার অক্ষর লেখানো যেত। সেই সময়কালে পুথির মাহাত্য ছিল অপরিসীম। তাদের সৃষ্টি সম্পর্কে লিপিকুশলীরা ছিলেন গর্বিত। আর তাদের খ্যাতি বা সন্মানও ছিল বিশ্বব্যাপী।
২) “আমরা কালি তৈরি করতাম নিজেরাই”- কোন প্রসঙ্গে লেখকের এই উক্তি ? প্রাবন্ধিকরা কী ভাবে কালি তৈরি করতেন ?
উৎসঃ
বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক “নিখিল সরকার”“শ্রীপান্থ” ছদ্মনামে তাঁর “কালি কলম মন” প্রবন্ধগ্রন্থের “হারিয়ে যাওয়া কালি কলম” প্রবন্ধটি রচনা করেছেন। উদ্ধৃত তাৎপর্যপূর্ণ অংশটি তাঁর এই প্রবন্ধ থেকে চয়ন করা হয়েছে।
আমরা বলতে যাদের বোঝানো হয়েছেঃ
পেশায় সাংবাদিক হওয়ার সুবাদে কালি ও কলমের সঙ্গে প্রাবন্ধিকের যোগাযোগ ছিলো খুবই ঘনিষ্ঠ। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে কালি কলমের ব্যবহার কমে যাওয়ার কথা বলতে গিয়ে প্রাবন্ধিক নিজেদের ছোটোবেলার স্মৃতিচারণ প্রসঙ্গে উদ্ধৃত কথাটি বলেছেন।
কালি তৈরির পদ্ধতিঃ
ছোটোবেলায় প্রাবন্ধিকরা যখন গ্রামের বিদ্যালয়ে পড়তেন, তখন তাদের নিজেদের লেখার কালি নিজেদেরই তৈরি করে নিতে হতো। সে সময় কালি তৈরি করার একটি প্রথাগত পদ্ধতি ছিল। একটি ছড়ার আকারে প্রাবন্ধিক তার বর্ণনা প্রদান করেছেন-
“তিল ত্রিফলা শিমূল ছালা
ছাগ দুগ্ধে করি মেলা
লৌহ পাত্রে লোহায় ঘষি
ছিঁড়ে পত্র না ছাড়ে মসী।”
অর্থাৎ তিল, ত্রিফলা ও শিমূলের ছালকে ছাগলের দুধে মিশিয়ে লোহার পাত্রে লোহা দিয়ে ঘষতে হবে। এই পদ্ধতিতে যে কালি তৈরি হবে, তা দিয়ে লিখলে পাতা ছিঁড়ে যাবে, তবু কালি ছাড়বে না।
কিন্তু এই পদ্ধতিটি বেশ জটিল। তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রাবন্ধিকরা সহজ উপায়ে কালি তৈরি করতেন। তখন কাঠের উনুনে রান্না হত। ফলে রান্না করার পাত্রের নিচে প্রচুর পরিমাণে ভুসো কালি জমত। সেই কালি প্রাবন্ধিকরা লাউ পাতা দিয়ে ঘষে তুলে নিয়ে তাতে জল মিশিয়ে তাতে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিতেন। যারা একটু বেশি ওস্তাদ, তারা আবার ওই কালিতে পোড়া আতপ চাল গুঁড়ো করে মেশাতেন, কিম্বা হরিতকী মেশাতেন।
এইভাবেই প্রাবন্ধিক তার তার সমবয়সী শিক্ষার্থীরা তাদের শৈশবকালে নিজেরাই বাড়িতে কালি তৈরি করে তাদের কালির প্রয়োজন মেটাতেন।
LINK TO VIEW PDF FILES (ONLY FOR SUBSCRIBERS)
হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধ থেকে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর শুধুমাত্র সাবস্ক্রাইবারদের জন্যঃ
১) “আমার মনে পড়ে প্রথম ফাউন্টেন কেনার কথা”- বক্তার আসল নাম কী? তাঁর ফাউন্টেন কেনার ঘটনাটি সংক্ষেপে বিবৃত করো।
২) “আশ্চর্য, সবই আজ অবলুপ্তির পথে”- কোন্ জিনিস আজ অবলুপ্তির পথে? এই অবলুপ্তির কারণ কী? এ বিষয়ে লেখকের মতামত কী?
৩) “কলমকে বলা হয় তলোয়ারের চেয়েও শক্তিধর।”- কলমকে তলোয়ারের চেয়েও শক্তিধর বলার কারণ কী?
৪) ‘ফাউন্টেন পেন’ বাংলায় কী নামে পরিচিত? নামটি কার দেওয়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে? ফাউন্টেন পেনের জন্ম ইতিহাস লেখো।
৫) ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধ অনুসরণে বিভিন্ন সভ্যতার মানুষের লেখনি সামগ্রীর পরিচয় দাও। অথবা কলমের বিবর্তনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লেখো।
৬) “মুঘল দরবারে একদিন তাদের কতনা খাতির, কতনা সম্মান।”- আলোচ্য অংশে কাদের কথা বলা হয়েছে? তাদের খাতির ও সম্মানের পরিচয় দাও।