শব্দ ও পদ । বাংলা ব্যাকরণ
WBNOTES.IN ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলা ব্যাকরণ বিষয় থেকে শব্দ ও পদ সম্পর্কে বিষদ আলোচনা এখানে প্রদান করা হলো। শিক্ষার্থীরা এই শব্দ ও পদ । বাংলা ব্যাকরণ পাঠের মধ্য দিয়ে বাংলা ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শব্দ ও পদ সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান অর্জন করতে পারবে।
শব্দ ও পদ :
১) শব্দ কাকে বলে?
উঃ ভাষাবিজ্ঞানে, শব্দ বলতে কোনো ভাষার মৌখিক ও লৈখিক একককে বোঝায়। ব্যাকরণিক সংজ্ঞা মতে, শব্দ বলতে কিছু অর্থবোধক ধ্বনিসমষ্টিকেও নির্দেশ করে, যা একটি বাক্য গঠনের মূল উপাদান। এক্ষেত্রে শব্দকে “পদ” বলে। শব্দ একাধিক বর্ণ ও অক্ষর সমন্বয়ে গঠিত হয়ে থাকে।
২) শব্দের শ্রেণিবিভাগ করো।
উঃ বাংলা ভাষার শব্দকে উৎপত্তিগত দিক দিয়ে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এ ভাগগুলো হলো : তৎসম শব্দ, অর্ধ-তৎসম শব্দ, তদ্ভব শব্দ, দেশি শব্দ ও বিদেশি শব্দ।
নিম্নে শব্দের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে বিষদ আলোচনা করা হল –
শব্দের উৎসগত শ্রেণিবিভাগঃ
বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত শব্দগুলি কোনটি কোথা থেকে এসেছে- তার উপর ভিত্তি করে শব্দকে নিম্নলিখিত শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। এবিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে বাংলা শব্দভান্ডার অধ্যায়ে। এখানে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।
তৎসম শব্দঃ
বাংলায় প্রচলিত খাঁটি সংস্কৃত শব্দগুলিকে বলে তৎসম শব্দ। যেমন- পিতা, মাতা, গৃহ, বিদ্যালয় ইত্যাদি।
অর্ধ-তৎসম শব্দঃ
বাংলায় প্রচলিত বিকৃত বা ভাঙা সংস্কৃত শব্দগুলি অর্ধতৎসম শব্দ। যেমন- কেষ্ট, বোষ্টম, মোচ্ছব ইত্যাদি।
তদ্ভব শব্দঃ
সংস্কৃত থেকে প্রাকৃত, অপভ্রংশের স্তর পেরিয়ে যে শব্দগুলি বাংলা ভাষায় স্থান পেয়েছে সেগুলি তদ্ভব শব্দ।
দেশি শব্দঃ
আর্যরা এদেশে আসার আগে যারা এখানে বসবাস করত তাদের ভাষার যেসকল শব্দ বাংলায় প্রচলিত রয়েছে, সেগুলি দেশি শব্দ। যেমন- ঝিঙ্গা, ডিঙি ইত্যাদি।
প্রাদেশিক শব্দঃ
ভারতের অন্যান্য প্রদেশের ভাষা থেকে যেসকল শব্দ বাংলা ভাষায় স্থান পেয়েছে সেগুলি প্রাদেশিক শব্দ। যেমন- হরতাল (গুকরাটি), চুরুট (তামিল) ইত্যাদি।
বিদেশি শব্দঃ
ভারতের বাইরে প্রচলিত ভাষা থেকে যেসকল শব্দ বাংলা শব্দ ভান্ডারে স্থান পেয়েছে তাদেরকে বিদেশি শব্দ বলা হয়। ইংরেজি, আরবি, ফারসি, পর্তুগিজ প্রভৃতি অনেক ভাষার শব্দ বাংলায় প্ৰচলিত আছে। যেমন- স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, স্টাডি, চেয়ার, বেঞ্চ ইত্যাদি।
মিশ্র শব্দঃ
একটি ভাষা শব্দের সঙ্গে অপর একটি ভাষার শব্দ, প্রত্যয়, উপসর্গ ইত্যাদি যোগে যে শব্দ তৈরি হয়, তাকে মিশ্র শব্দ বলা হয়। যেমন- হেডপন্ডিত (ইংরেজি+সংস্কৃত)।
নবাগত বা নবগঠিত শব্দঃ
যুগের প্রয়োজনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনেক নতুন শব্দ বাংলা শব্দ ভান্ডারে স্থান পেয়েছে। এইসব শব্দগুলিকে নবাগত বা নবগঠিত শব্দ বলা হয়। যেমন- ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টা, ট্রোল ইত্যাদি।
গঠন অনুসারে শব্দের শ্রেণিবিভাগঃ
গঠন অনুসারে শব্দকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলি হল- মৌলিক শব্দ এবং সাধিত শব্দ।
মৌলিক শব্দঃ
যে শব্দকে বিশ্লেষণ করা যায় না এবং জোরপূর্বক বিশ্লেষণ করলেও কোনো অর্থপ্রকাশক শব্দ পাওয়া যায় না তাকে তাকে মৌলিক শব্দ বলে। যেমন- মা, বাবা, ভাই, বই, ঘর ইত্যাদি।
সাধিত শব্দঃ
সাধিত কথাটির অর্থ সম্পাদিত। ধাতু বা শব্দের সঙ্গে প্রত্যয়, উপসর্গ বা অনুষঙ্গ যোগ করে অথবা দুটি স্বাধীন শব্দ সমাসবদ্ধ হয়ে যে নতুন শব্দ তৈরি করে তাদেরকে সাধিত শব্দ বলে। সাধিত শব্দকে বিশ্লেষণ করলে এক বা একাধিক মৌলিক শব্দ পাওয়া যায়।
সাধিত শব্দের বিবিধ বিভাগগুলি হল –
প্রত্যয়-নিষ্পন্ন শব্দঃ
শব্দ বা ধাতুর সঙ্গে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে প্রত্যয় নিষ্পন্ন শব্দ তৈরি হয় প্রকৃতি-প্রত্যয় অধ্যায়ে এবিষয়ে বিশদে আলোচনা করা হয়েছে। যেমন- পঠ্+ণক = পাঠক, হস্ত+ইন = হস্তী ইত্যাদি।
সমাসজাত শব্দঃ
পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুই বা তার বেশি পদের মিলনকে বলা হয় সমাস। যেমন- রাজার পুত্র= রাজপুত্র, বীণা পাণিতে যার= বীণাপাণি ইত্যাদি। সমাস অধ্যায়ে এবিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
উপসর্গযুক্ত শব্দঃ
ধাতুর পূর্বে উপসর্গ যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠিত হয়। যেমন- প্ৰ+ শান্ত= প্রশান্ত, প্ৰ+ বেশ = প্রবেশ ইত্যাদি।
অনুষঙ্গ নিষ্পন্ন শব্দঃ
অনুষঙ্গ শব্দটি প্রসঙ্গ, সাহচর্য, সংযোগ ইত্যাদি নানা অর্থে ব্যবহৃত হয়। তবে নতুন শব্দ গঠনের ক্ষেত্রে অনুষঙ্গ বলতে বোঝায় প্রাসঙ্গিক ভাব। একটি মূল শব্দের ভাবকে অনুসরণ করে আরেকটি শব্দ এসে যুক্ত হলে যে শব্দটি তৈরি হয় তাকে অনুষঙ্গ নিষ্পন্ন শব্দ বলা যেতে পারে।
অনুষঙ্গ নিষ্পন্ন শব্দ তিন রকমের হয়। যথা –
শব্দদ্বৈতঃ
একই শব্দ পরপর দুবার ব্যবহৃত হয় কোন বিশেষ ভাব প্রকাশ করলে তাকে শব্দদ্বৈত বলা হয়।
যেমন-
কেমন গরমগরম পেলে?
দিনদিন স্কুল কামাই করা ভালো নয়।
বস্তাবস্তা চাল দেওয়া হচ্ছে।
মনে মনে কলা খেও না।
অনুকার শব্দঃ
একটি শব্দের অনুকরণে বা বিকারে যখন আরেকটি শব্দ এসে যুক্ত হয়, তখন তাকে অনুকার শব্দ বলা হয়।
যেমন, জড়-সড়, খাবার-দাবার, মুড়ি-টুড়ি, ভাত-টাত, জল-টল ইত্যাদি।
ধ্বন্যাত্মক শব্দঃ
বাস্তব ধ্বনির অনুকরণে সৃষ্ট শ্রুতিগ্রাহ্য বা অনুভূতিযোগ্য শব্দকে বলা হয় ধ্বন্যাত্মক শব্দ। যেমন- বেশি কথা বলা অর্থে বকবক, কুকুরের ডাক বোঝাতে ‘ঘেউঘেউ’ শব্দগুলি ব্যবহার করা হয়। এগুলি সব ধ্বন্যাত্মক শব্দের উদাহরণ।
অর্থমূলক শ্রেণিবিভাগঃ
অর্থই শব্দের প্রাণ। সেজন্য শব্দের শ্রেণিকরণে অর্থের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এক্ষেত্রে শব্দের গঠন বিচার্য নয়, অর্থের প্রেক্ষাপটই প্রধান বিবেচ্য। প্রত্যয়নিষ্পন্ন শব্দ হোক বা সমাসবদ্ধ পদ হোক- অর্থ অনুসারে বাংলা শব্দগুলিকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে, যথা –
যৌগিক শব্দঃ
যেসব শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও প্রচলিত অর্থ একই, তাদেরকে যৌগিক শব্দ বলা হয়। অন্যভাবে বললে, যেসব শব্দের প্রচলিত অর্থ তার মূল অর্থকে অনুসরণ করে, তাদেরকে যৌগিক শব্দ বলা হয়।
যেমন- পাঠক, রাজপুত্র ইত্যাদি।
রূঢ়ি শব্দঃ
যে শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক অর্থ আলাদা হয়, তাদেরকে রূঢ়ি শব্দ বলে।
যেমন – হস্তী শব্দটি প্রত্যয়জাত শব্দ এবং এর ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হস্ত বা হাত আছে যার। কিন্তু প্রচলিত অর্থে হস্তী বলতে একটি বিশেষ প্রাণীকে (হাতিকে) বোঝায়।
যোগরূঢ় শব্দঃ
যেসব শব্দের প্রচলিত অর্থ এবং ব্যুৎপত্তিগত অর্থ একেবারে আলাদা নয় আবার সম্পূর্ণ একও নয়, বরং ব্যুৎপত্তিগত অর্থের সঙ্গে প্রচলিত শব্দের একটি যোগ থাকে, সেই শব্দকে যোগরূঢ় শব্দ বলা হয়। অন্যভাবে বললে, যেসব রূঢ়ি শব্দের ব্যবহারিক অর্থের সঙ্গে ব্যুৎপত্তিগত অর্থের একটি যোগ (সম্পর্ক) থাকে, তাদেরকে যোগরূঢ়ি শব্দ বলা হয়।
যেমন – পঙ্কজ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ পঙ্কে বা পাঁকে জন্মে যা। কিন্তু প্রচলিত অর্থে পঙ্কজ বলতে পদ্মকে বোঝায়। পদ্ম যেমন পাঁকে জন্মায় তেমনি আরো অনেক কিছু পাঁকে জন্মায়, কিন্তু কেবল পদ্মকে পঙ্কজ বলা হয়।
জোড়কলম শব্দঃ
দুই বা তার বেশি শব্দের খণ্ডিত অংশ জুড়ে দিয়ে নতুন যে শব্দটি পাওয়া যায় তাকে জোড়কলম শব্দ বলে।
যেমন- ধোঁয়া এবং কুয়াশা মিলে ধোঁয়াশা শব্দটি এসেছে।
লোকনিরুক্তিঃ
কোনো অপরিচিত শব্দ লোকমুখে প্রচলিত হয়ে অল্পবিস্তর ধ্বনিসাম্যের ফলে যদি পরিচিত শব্দরূপ লাভ করে এবং এই প্রক্রিয়ায় উক্ত মূল শব্দের উচ্চারণ এবং অর্থ বিকৃতি ঘটে, তবে নবজাত শব্দটিকে বলা হয় লোকনিরুক্তি।
যেমন – Arm Chair থেকে আরাম কেদারা শব্দটি এসেছে।
৩) পদ কাকে বলে?
উঃ ব্যাকরণের ভাষায় বাক্যে ব্যবহৃত বিভক্তিযুক্ত শব্দকে পদ বলে।
যেমন- রতন স্কুলে যায়। এই বাক্যে তিনটি শব্দ রয়েছে যথা: “রতন”, “স্কুলে”, “যায়” প্রত্যেকটি এক একটি পদ। সুতরাং, বাক্যে ব্যবহৃত বিভক্তিযুক্ত প্রত্যেকটি শব্দকে পদ বলা হয়।
৪) পদের শ্রেণিবিভাগ করো।
উঃ পদ মুলত দুই প্রকার। যথা –
- সব্যয় পদ
- অব্যয় পদ
সব্যয় পদ চার প্রকার। যথা-
- বিশেষ্য
- বিশেষণ
- সর্বনাম
- অব্যয়
- ক্রিয়াপদ
PDF DOWNLOAD LINK ONLY FOR SUBSCRIBERS