নদীর বিদ্রোহ গল্পের বড়ো প্রশ্নের উত্তর । দশম শ্রেণি বাংলা
WBNOTES.IN ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে দশম শ্রেণির মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য নদীর বিদ্রোহ গল্পের বড়ো প্রশ্নের উত্তর প্রদান করা হলো। মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে চলা দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এই নদীর বিদ্রোহ বড়ো প্রশ্নের উত্তর –গুলি তৈরি করে তাদের পরীক্ষা প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারবে।
নদীর বিদ্রোহ গল্পের বড়ো প্রশ্নের উত্তর । দশম শ্রেণি বাংলা :
১) “নিজের এই পাগলামিতে যেন আনন্দই উপভোগ করে।”- কার, কোন্ পাগলামির কথা এখানে বলা হয়েছে? কীভাবে সে পাগলামিতে আনন্দ উপভোগ করে লেখো। ২+৩
উৎসঃ
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাকার “মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়” রচিত “সরীসৃপ” গ্রন্থের নয় সংখ্যক গল্প “নদীর বিদ্রোহ” থেকে প্রশ্নোক্ত তাৎপর্যপূর্ণ অংশটি চয়ন করা হয়েছে।
পাগলামির পরিচয়ঃ
প্রশ্নোক্ত অংশে নদীপ্রেমিক স্টেশনমাস্টার নদেরচাঁদের পাগলামির কথা বলা হয়েছে। নদী-অন্তপ্রাণ নদেরচাঁদ নদীর সাথে এক অবিচ্ছেদ্য আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। স্টেশনমাস্টারের মতো এক গুরুত্বপূর্ণ কাজের দ্বায়িত্ব পালন করা সত্ত্বেও একদিনও নদীকে না দেখে থাকা নদেরচাঁদের পক্ষে সম্ভবপর ছিল না। পাঁচদিন অবিরাম বর্ষণের পরবর্তিতে নদীর উত্তাল রূপ কল্পনাকারী নদেরচাঁদের নদীর কাছে ছুটে যাওয়ার ঘটনাকেই প্রশ্নোক্ত অংশে ‘পাগলামি’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।
আনন্দ উপভোগের পরিচয়ঃ
বর্ষণমুখর উন্মত্ত নদীস্রোত দেখে নদেরচাঁদ স্তম্ভিত হয়ে যায়- “জলপ্রবাহকে আজ তাহার জীবন্ত মনে হইতেছিল।” নদীর ভয়াল রূপে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ দেখে – “নদেরচাঁদের ভারী আমোদ বোধ হইতে লাগিল।” আর তখনই সে শিশুসুলভ ঔৎসুক্য দেখিয়ে তার পকেট থেকে দুই দিনের প্রচেষ্টায় তার স্ত্রীকে লেখা পাঁচ পৃষ্ঠাব্যাপী পত্রটি টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে চঞ্চল নদীস্রোতে ভাসিয়ে দেয়। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে সে তার সমগ্র সত্ত্বা দিয়ে নদীকে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়।
এইভাবেই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র নদেরচাঁদ তার আত্মার আত্মীয় নদীর খরস্রোতা রূপ দেখে আনন্দ উপভোগ করে।
২) নদীর বিদ্রোহ গল্প অবলম্বনে নদেরচাঁদ চরিত্র আলোচনা করো। ৫
উৎসঃ
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ‘মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়’ রচিত ‘নদীর বিদ্রোহ’ ছোটোগল্পের নায়ক চরিত্র, ত্রিশ বছর বয়সি স্টেশনমাস্টার নদেরচাঁদ।
চরিত্র বিশ্লেষণঃ
নদেরচাঁদের চরিত্রের যে দিকগুলি সকল পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সেগুলি নিম্নরূপ-
নদীপ্রেমঃ
নদেরচাদের চরিত্রের সবচেয়ে বড়ো বৈশিষ্ট্য সে নদীপ্রেমিক। আপাতদৃষ্টিতে তার এই ভালোবাসা অস্বাভাবিক মনে হলেও নদীতীরে জন্ম এবং নদীর জলহাওয়ায় বেড়ে ওঠায় তার প্রাণপ্রবাহের সঙ্গে নদীপ্রবাহের সংযোগ ঘটেছে। আর তাই “নিজের এই পাগলামিতে যেন আনন্দই উপভোগ করে”।
সংবেদনশীলঃ
নদেরচাঁদ সংবেদনশীল। দেশের ক্ষীণস্রোতা নদীটি নদেরচাদের কাছে অসুস্থ, দুর্বল আত্মীয়ার মতো মমতা পায়। অনাবৃষ্টিতে ক্ষীণধারা সংবেদনশীলতা নির্জীব নদীটি দেখে পরমাত্মীয়ার বিয়োগ সম্ভাবনায় কষ্ট অনুভব করে নদেরচাঁদ- “বড়ো হইয়া একবার অনাবৃষ্টির বছরে নদীর ক্ষীণ স্রোতধারাও প্রায় শুকাইয়া যাইবার উপক্রম করিয়াছে দেখিয়া সে প্রায় কাঁদিয়া ফেলিয়াছিল; দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগিতে ভুগিতে পরমাত্মীয়া মরিয়া যাইবার উপক্রম করিলে মানুষ যেমন কাঁদে”। আবার নদীর ভাষা, নদীর সুর সে উপলব্ধি করতে পারে।
শিশুসুলভ উন্মাদনাঃ
পাঁচ দিন অবিশ্রাম বর্ষণে নদীতীরে না যাওয়ায় নদেরচাঁদের জীবনের স্বাভাবিকতা ব্যাহত হয়। নদীর ব্রিজে তার প্রাত্যহিক বসার স্থান থেকে নদীস্রোতের বিকাশ দেখে তার শিশুসুলভ ঔৎসুক্য জাগে- “নদেরচাঁদের ভারী আমোদ বোধ হইতে লাগিল”। এমনকি, উন্মত্ত নদীর স্রোত দেখতে পেয়ে আনন্দে নদেরচাঁদ নদীর সঙ্গে শিশুসুলভ খেলায় মেতে ওঠে।
বাস্তববোধঃ
নদেরচাঁদ বাস্তববোধসম্পন্ন। তাই সে প্রকৃতি ও যন্ত্রসভ্যতার সংঘাতকে উপলব্ধি করে। মানুষ সভ্যতার বিকাশে প্রকৃতিকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করলেও প্রকৃতি একদিন তার প্রতিশোধ নেবে। তাই- “নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়াছে”। সে বুঝতে পারে সভ্যতার আগ্রাসনই মানুষের ধ্বংসের বাস্তববোধ কারণ।
ট্র্যাজিকতাঃ
নদেরচাঁদ ট্র্যাজিক চরিত্র। তাই সে যদিও উপলব্ধি করে সভ্যতার বিকাশে প্রকৃতির স্বাভাবিকত্বকে নষ্ট করার ফল মানুষকে ভোগ করতে হবে, তবুও নিয়তির পরিহাসে যন্ত্রসভ্যতার প্রতীক ৭নং ডাউন প্যাসেঞ্জারের চাকায় তার ট্র্যাজিক মৃত্যু হয়। নদেরচাঁদের মৃত্যু যেন যন্ত্রসভ্যতার দ্বারা মানবসভ্যতার সমাপ্তির ইঙ্গিত দিয়ে যায়।
এইরূপে নদেরচাঁদ চরিত্রটি গল্পকে সার্থকতা প্রদন করে।
LINK TO VIEW PDF FILE (ONLY FOR SUBSCRIBERS)
নিম্নের PDF প্রশ্নের উত্তরগুলি শুধুমাত্র আমাদের Subscribers -দের জন্য। দশম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের সাবস্ক্রিপশন নিতে যোগাযোগ করুন আমাদের সাথেঃ What’s App: 7001880232
৩) “নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়াছে”-অংশটির তাৎপর্য আলোচনা করো। ৫
উত্তর জানতে এখানে টাচ/ক্লিক করতে হবে