পোটরাজ । শঙ্কর রাও খারাট
দ্বাদশ শ্রেণির নতুন সিলেবাস অনুসারে সেমিস্টার পদ্ধতিতে যে নতুন পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়েছে, তার প্রস্তুতির লক্ষ্যে WBNOTES.IN ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির তৃতীয় সেমিস্টার প্রদান করতে চলা শিক্ষার্থীদের জন্য পোটরাজ । শঙ্কর রাও খারাট গল্পটি প্রদান করা হলো। যে সকল শিক্ষার্থীরা একাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় সেমিস্টার প্রদান করে দ্বাদশ শ্রেণির তৃতীয় সেমিস্টার বাংলা বিষয়ের জন্য পড়াশোনা শুরু করেছো তাদের জন্য দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা তৃতীয় সেমিস্টার -এর (Class Twelve 3rd Semester Bengali) ভারতীয় গল্প পোটরাজ এবং পোটরাজ গল্পের MCQ প্রশ্নের উত্তর -এর লিঙ্ক নিম্নে প্রদান করা হলো।
পোটরাজ । শঙ্কর রাও খারাট :
গ্রামের পোটরাজ দামার বাড়ির আবহাওয়া ভারী। সমস্ত জায়গায় কেবল লোকেরা হাঁটুর উপর মাথা রেখে ব’দে। দামার বৌয়ের চোখ জল ভরা। থেকে-থেকেই সে শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছছে। পাড়ার বৌ-ঝিরা আসছে, একটুক্ষণ থেকেই চ’লে যাচ্ছে। মাঝে-মাঝেই কেউ-না কেউ এসে দোরে দাঁড়াচ্ছে।
লোকে এসে শুধোচ্ছে, ‘দুরপত, পোটরাজ কেমন আছে?’
‘এখনও প্রাণটুকু আছে খালি, বাবা।’ করুণ মুখে জবাব দিচ্ছে সে।
‘ভেবো না, ভালো হ’য়ে যাবে, ভালো হ’য়ে যাবে। কাঁদছো কেন? সারা গাঁয়ে একই অবস্থা। প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই একজন অন্তত বিছানায়।’
‘জানি, বাবা। তাও ভয় লাগে।’
‘দুরপত, কারু যাওয়ার সময় হ’লেই সে যাবে। আর যার সময় হয়নি, যা-ই
রোগ হোক-না কেন, সে টিকে যাবে।’
‘জানি, বাবা। ঠিক। কিন্তু বড়ো কঠিন রোগ।’
‘কেউ না বলেছে? এখন ঠাকুরের মুখে চাওয়ার সময়। হয়তো এবার মা ঝোঁটয়ে নিয়ে যাবেন। তাঁর কাছে সকলে সমান।’
ঠিক এইসময়ে বাড়ির সামনের নিমগাছে একটা কাক চেঁচিয়ে ওঠে। ঘুরপত বলে, ‘এই বাচ্চারা। মার্ বেজম্মাকে। পোটরাজকে ডাকে রে।’ © www.wbnotes.in
কাকটা ডেকেই চলে। দুরপতের ছেলে তার দিকে ঢিল ছোঁড়ে। ডাকতে-ডাকতেই কাকটা উড়ে পালায়।
‘সবসময় বেজন্মাটা আমাদের শাপমধ্যি করছে।’ দুরপত গজগজ করে আপনমনে।
এ হলো আষাঢ় মাস। সারা আকাশ মেঘে ঢাকা। সমানে ঝিরঝিরিয়ে বৃষ্টি পড়ছে। মাটি কাদায় আঠাল হ’য়ে এলো। গুমোট। গাছের পাতা একটুও নড়ছে না, স্থির। তা থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় জল ঝরছে।
দামার বাড়ির দরজায় একটা কুকুর টানা চীৎকার জুড়ে দিলে। শুনে দূরপতের প্রাণ শুকোয়। সেই আওয়াজের উপর দিয়ে সে ট্যাঁচায়, ‘হে ভগবান, গোর দেয় না কেন কেউ কুত্তাটাকে।’
‘ছেড়ে দাও। ভবিষ্যতের কথা বলছে গো।’ দুরপতের পাশে বদা বৌটি বলে। তখন দুরপতের অছ পাশে বসা বঞ্চলা বলে, ‘ঘরপা, মারী-আই-এর যাত্রায় গিয়েছিলি তো?’
‘যেতে ভুলি কী ক’রে?’
‘তা বলিনি। ভাবলাম এই বিপদের সময়ে যদি ভুলে গিয়ে থাকিস?’
‘না, মেয়ে, মা যদি নিদয়াও হন তাঁকে তো কিছু দিতেই হবে।’
‘ছাড়, তো। হঠাৎ কথাটা মাথায় এলো ব’লে বললাম।’
‘সব দেবতার মধ্যে ওঁরে তুচ্ছি করি সাধ্যি কী। ওরে কেউ হেলা করেছে কি টেরটি পেয়েছে। ক্রোধ তেনার বন্ননার বাইরে। ওরে তুষ্ট রেখে ভালো করেছিস। এবার সে ভালো হ’য়ে যাবে।’
মেয়েটি দুরপতের মুখে তাকিয়ে যোগ করে, ‘এই দ্যাখো, কাঁদিস কেন? কাঁদলে অমঙ্গল হয়। দুরপত, তোর সোয়ামির কিছু হবে না রে। মা ওকে দেখবেন।’
‘সে তো বটেই। ওর বাপ-মা মায়ের কাছে মানত করেছিলো ওকে। সে-জন্যেই তো ও পোটরাজ।’
‘বঞ্চলাবাঈ বলে, ‘তাহ’লে? এই তো বুঝেছো। দামা হলো গিয়ে মায়ের পোটরাজ। তাঁর ভক্ত। নিত্যি তাঁর পুজো করে। মা কি তাঁর ভক্তকে ভালোবাসেন না? তাঁর রোষে সে পড়ে কী ক’রে? ব্যাপারটা কী? উনি কি দেখতে পান না এ-ঘরে ছোটো ছেলেপিলেরা রয়েছে?’ দূরপা বলতে শুরু করে, ‘এ-সব কথাই মনে জেগেছে গো। হে মা, তোমার রোষে পড়লাম কেন? এ-বাড়িতে ঢোকা ইস্তক মঙ্গলবারে শুদ্রবারে তোমার নামে উপুশ করেছি। হে মা, বছর-বছর তোমার যাত্রা করি। তোমায় দুধে, দই-এ চান করাই। সবুজ শাড়ি পরাই। কপালে হলুদ, কুমকুম দিই। তোমার সুমুখে ভোগ দিই, নারকেল দিই। প্রতি আষাঢ়ে অমাবশ্যায় তোমার সামনে স্নানের পর ভেজা শাড়িতে গড়ান দিই। বছর-বছর যেমন পারি তোমায় দিই। ছাগল দিতে না-পারলে কুঁকড়ো দিই। তোমার দোরে রক্তের ছড়া দিই। © www.wbnotes.in
‘মা, এ-বাড়িতে যেদিন থেকে বৌ হ’য়ে এসেছি তোমার সামনে পিদিম দিয়েছি। কখনো তোমায় আধারে রেখেছি, বলো মা? তোমারে এত ভক্তি করি তবু আমার কপালে এমন কেন মা? মা, তোমার লিলে বুঝি না।’
দুরপত ব’লেই চলে, ব’লেই চলে। তার গলায় আর্তি। শেষে মারী-আই-এর মন্দিরের দিকে মুখ ক’রে হাত জোড় ক’রে সে প্রার্থনা করে।
‘দেবী, আমি কি কোনো ভুল করেছি? কী ভুল করেছি? ভুল ক’রে থাকলে শাস্তি দাও। কিন্তু আমার সোয়ামিকে বাঁচাও। তার হাগা বমি বন্ধ ক’রে তাকে ভালো ক’রো মা।’
আবহাওয়া থমথমে। গাঁয়ের সর্বত্র কান্না আর চীৎকারের আওয়াজ। আর দুরপতের বাড়ির বাইরের নিমগাছে ব’সে একটা কাক ডাকছে।
শুনে তার হাত-পা স্থির।
রাতে একটা ফেউ বাড়ির চাদ্দিকে চক্কর দিতে-দিতে তীক্ষ্ণ চীৎকারে অন্ধকারকে চেরে। আর দুরপতের বুকের যুকধুকি পলকের জন্য থমকায়।
তারপর নতুন দিন হয়।
আকাশে মেঘ ঘন ক’রে আসে। চাদ্দিক অন্ধকার, খাঁ-খ। লাগে। সমানে বিষ্টি পড়ছে। সূর্য উঁচু হ’য়ে যায়, কিন্তু মেঘের জন্য চোখে পড়ে না। এমন সময় গাঁয়ের মোড়ল আর তার চেলা দুয়ারে আসে। চেঁচিয়ে বলে, ‘দামা, বাড়ি আছো নাকি, দামা?’
পোটরাজের বাড়ির ভিতর থেকে কোনো জবাব আসে না। এমনকী ফিশ-ফিশানিও না। তাতে মোড়ল গলা চড়ায়, ‘ওহে দামা, পোটরাজ বাড়ি আছে?’ শেষ পর্যন্ত কেউ-একজন উঁকি মারে এবং লোক চারজনকে দেখে বলে, ‘গ্রাম-মণ্ডলের লোকেরা এয়েছে গো।’
বঞ্চলাবাঈ বলে, ‘সে তো সত্যি। পোটরাজ কেমন আছে দেখতে লোকে তো আসবেই। তিনদিন হ’য়ে গেলো পোটরাজ রোঁদে বেরোয় না।’
‘তাছাড়া প্রায় সব বাড়িতেই একজন ক’রে বিছানায়।’
‘কে যে কাকে বলে।’
‘কে কী বলবে। কেউ জানে না আজ তার কপালে কী ঘটবে।’
‘তা ঠিক। তাও সবাই অন্যকে জিগেশ করে।’
‘ভুলো না, দামা গাঁয়ের পোটরাজ। আর এখন যখন মা খেল শুরু করেছেন যে-ই তাঁর সামনে পড়বে সে-ই তাঁর কোপে পড়বে। তাই এই দোরে লোককে আসতে হবেই।’ মেয়েরা যখন কথা বলছিলো দূরপত দরজার কাছে গেলো। বাইরে আসতে-আসতে আঁচল দিয়ে চোখ মুছলো দুরপত। মোড়ল-এর সামনে দাঁড়িয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে বললো, ‘পেন্নাম হই।’ © www.wbnotes.in
তার অবস্থা দেখে মোড়ল শুধোলে, ‘দামা কোথায় এ-কদিন?’
‘ঘরে, বিছানায়।’
‘বিছানায়? কেন?’
‘মায়ের দয়া।’ বলতে গিয়ে সে কেঁদে ফ্যালে। মুখ ঢাকে সে।
‘বলো কী, মা নিজের ভক্তকেই হেনেছেন?’ মোড়ল অবাক হয়।
আরেকজন বলে, ‘নয় কেন? মানুষ তো সে।’
‘তা ঠিক, কিন্তু তার সকাল-সাঁঝ মায়ের ছায়ায় বসবাস।’
‘কিন্তু দেবীর চক্কর যখন শুরু হয়েছে কে যে কোপে পড়বে আর কে পড়বে না তার ঠিক নেই।’
‘তা ঠিক,’ মোড়ল বলে। তারপর দূরপতের দিকে ঘুরে তাকায়, ‘দুরপত, আমাদের আরেকবার যাত্রা করতেই হবে।’
‘হ্যাঁ। করতেই হবে। মাকে খুশি করতেই হবে।’ কান্নার ফাঁকে-ফাঁকে বলে দুরপত।
‘কিন্তু আমাদের সেবাইৎকে না-হ’লে যাত্রা করা যাবে কী ক’রে?’
‘ঠিক, কিন্তু মরদটা আমার প’ড়ে আছে যে।’
‘দুরপত, মাকে গাঁয়ের সীমানায় নিয়ে যেতে হবেই।’
‘ঠিক। না-হ’লে মার চক্কর গাঁয়ের উপর থেকে কাটবে না।’ আরেকজন যোগ করে। ‘তাই দেবীকে মিছিল ক’রে গাঁয়ের সীমানার বাইরে রেখে আসতে হবে তো।’ © www.wbnotes.in
‘জানি, কিন্তু পোটরাজ যে বিছানায় প’ড়ে আছে। কী ক’রে করবে?’
মোড়ল’ এই কথা বলতে দুরপত বললে, ‘যদি শুধু পোটরাজ বিছানায় প’ড়ে থাকে সারা গাঁ “যাত্রা”য় যাবে না কেন?’
‘তা কী ক’রে হয়? সে হলো দেবীর পোটরাজ। তাকে ছাড়া “যাত্রা” হবে কী ক’রে?’
‘তা অবশ্য ঠিক। কিন্তু সে তো উঠতেই পারছে না। নড়তেই পারছে না।’
দুরপত এই কথা বলতে গাঁওবুড়োরা নিজেদের মধ্যে শলায় লাগলো। হঠাৎ মোড়লের মাথায় একটা কথা খেললো, ‘আরে। তোর বড়ো ছেলে তো বাড়িতেই আছে, আছে না?’
‘ওই হাইস্কুলে পড়ছে এখন যে-ছেলেটা? হ্যা, আছে।’
নব কথাই বলছি।’
‘ইয়া, বাড়িতেই বসে আছে।’
‘তা কর বাবার জায়গায় ও যদি “যাত্রা”টা করে তো ক্ষতি কী।
‘অতটুকু বাচ্চা পারবে কী? ওকে কি এখনই পোটরাজ বলা যায়।’
‘কোটবাজ যদি নাও হয় এখন ওকেই পোটবাজ ব’লে ধরতে হবে। শুর বাবা না-থাকলে তোর বাড়িতে তো একজন পোটবাজ থাকতে হবেই।’
‘তা তো হবেই। কিন্তু শুধু বাকিাতে কি পোটবাজ হয়। তার জতে দরকার “যাত্রা করা। তাছাড়া দেবীর কাছে কিছু-একটা মানত করাও দরকার।’
‘করুক না ৪. কী এখে-যায়। তাছাড়া গাঁয়ের অস্ত্যে একজন পোটবাজ তো দরকারই।
বুবলতের বড়ো ছেলে আনন্দ সব কথাই শুনতে পেলে। সে যতই শোনে ততই থামে। বাকিটা জীবন দেবীকে পিঠে ক’বে ব’য়ে বেড়াতে হবে ভাবতেই তার রাগ হ’তে থাকলো। নিশ্বাস ঘন হ’য়ে এলো। বুকের ওঠাপড়া দ্রুত হলো।
ইতিমধ্যে মোড়লের সঙ্গে যারা এসেছিলো তাদের মধ্যে একটা লোক সবজান্তার মতো ব’লে উঠলো, ‘ও রাজি না-হ’লে গোটা গাঁটাই মায়ের কোণে পড়বে। © www.wbnotes.in
কিন্তু একবার পোটরাজ হ’লে সারা জীবনই তো ওকে পোটরাজ থেকে যেতে হবে।’
‘হ্যাঁ, তো সে খারাপ কী? ভালোই তো।’
‘তোমরা বলছো! ছেলে আমার হাইস্কুলে ইংরেজি পড়ছে।’
‘তো? পোটরাজ হ’লে স্কুল কি পালিয়ে যাবে?’
‘তুমি তা বললে কী হবে, কিন্তু ওর কেমন লাগে, তা তো ভাবতে হবে।’
‘বাঃ, কেবল ছেলের কথাই ভাবছিস, বাকি গাঁ-টার কী হবে?’
‘দুজনের কথাই ভাবতে হবে।’
হঠাৎ মোড়লের সঙ্গে যারা এসেছিলো তাদের মধ্যে একজন একরোখা গোছের লোক কর্কশভাবে ব’লে উঠলো, ‘ছাড়, তো, ওকে পোেটরাজের পোশাক পরিয়ে পাঠাচ্ছিস কি না? হ্যাঁ, না, না? গাঁয়ের ধারে মিছিল নিয়ে যেতেই হবে।’ এই ধমকানোর সুর শুনে আনন্দ রাগে কাঁপতে শুরু করলে। লাফিয়ে উঠে সে হাত মুঠি করলে। রাগে তার চোখ ঠেলে বেরুচ্ছে। দূরপত ঠিক সেই সময় জবাব দিলে, ‘এ-র’ম কথায় মায়ের রাগ কি পড়বে?’
মোড়ল দুরপতকে বলে, ‘কথা ঘোরাস না। কাজের কথা বল। ভবিষ্যতের কথা ভেবে বল্ হ্যা কি না?’ ভয় দেখিয়ে গ্রামমণ্ডলের লোকেরা ফিরে গেলো। দুরণত বোঝে না কী করবে। ঘরে গিয়ে কপাল চাপড়ে মেঝেতে পড়ে সে। দামা শৃক্তবৃষ্টিতে বৌ-এর দিকে তাকিয়ে থাকে।
আর আনন্দ দৌড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। দূরপত ভাবে ছেলেটা দৌড়ে গেলো কেন? ভাবতে-ভাবতে উঠে সে দরজায় যায়। ভ্যাগে সে মারী-আই-এর বানের দিকে হনহনিয়ে যাচ্ছে। চেঁচিয়ে ডাকে, ‘আনন্দ, আনন্দ।’
কিন্তু আনন্দ দ্রুত চ’লে যায়।
সেদিন অনেক রাত্রে সে বাড়ি ফিরে আসে। তাকে দেখে মনে হয় কোনো একটা ঘোরের মধ্যে আছে। রাত্রি যায়। সকাল আসে। সূর্য উঠলে সে চুপচাপ কাছের নদীতে চান করতে যায়। চান সেরে ধীরে-ধীরে বাড়ি ফিরে বাবার পাশে এসে বসে। বাড়িতে তখনও যারা আছে তাদের কথা শোনে সে। মন দিয়ে শোনে। © www.wbnotes.in
‘শুনেছো। মা নিজে গাঁয়ের ধারে গিয়ে ব’সে আছেন।’
‘হা ভগবান! গেলেন কী ক’রে?’
‘বলিস কী রে, গেলেন কী ক’রে! দেবতা ডো। আজ এখানে, কাল ওখানে। বিশ্বসংসার ওনারই হাতে।’
‘ঠিক কথা! দেবীর লীলা?’
‘পেত্যয় যায় না।’
‘যা বলিস বল্। দেখে মনে হলো মা খুশিতে ব’সে। নতুন একটা সবুজ শাড়ি পরেছেন। গলায় অনেকগুলো সবুজ বালা দিয়ে তৈরি একটা নতুন হার।
রুপোর চক্ষু সামনে চেয়ে আছে।’
‘তা-ই কী খালি! সারা গাঁ সেখেনে ভেঙে পড়েছে।’
দুরপত মাঝে এসে পড়ে, ‘সত্যি? সত্যি নাকি?’ তার এখনও সন্দেহ যায়নি।
‘সত্যি তো বটেই। মা নিজেই গাঁয়ের ধারে চ’লে গেছেন। বসার জায়গাটাও নিজে বেছেছেন। গাঁয়ের লোকের বিশ্বেস দেবীর চক্কর এবার কেটে যাবে।’
‘ঠিক। এতেই বোঝা যায় দামাকে দেবী কী চোখে দ্যাখেন। পোটরাজ বটে!!’
‘বলছো তাই?’ দুরপতের আর খুশি ধরে না, ‘লোকে বলছে বটে দামার ভক্তির জোরেই মা গাঁয়ের ধারে গেছেন।’
‘লোকে বলছে দামা বড়ো পুণ্যবান।’
দামা, যে এতক্ষণ মড়ার মতো শূন্যচোখে শুয়েছিলো, শুনতে পেলো। দেহে যেন সে বল ফিরে পেলো। উঠে ব’সে জল চাইলো সে। খুব তেষ্টা পেয়েছে এইভাবে জল খেলো। তারপর একটু গরম ভাতের পায়েস খেলো। বেশ ভালো বোধ করতে লাগলো সে।
তাকে উঠে বসতে দেখে দুরপত একটু ঠাণ্ডা হলো। তার স্বামী হঠাৎ খাড়া হ’য়ে উঠেছে। এবার বেশ লাগছে তার। আকাশের দিকে স্পষ্টতই ভক্তি-ভরা চোখে তাকিয়ে সে হাত জোড় করলে। © www.wbnotes.in
‘হ’তে পারে, কিন্তু সকাল-সাঁঝ দেবীর ছায়ায় বাস।’
‘সে-কথা ঠিক। আর দেবীর চক্কর যখন শুরু হয়েছে কে তাঁর কোপে পড়ে ঠিক কী।’
‘সে তো বটেই। সবাই খালায় নারকোল আর নিভোদ নিয়ে গাঁয়ের ধারে চলেছে। যে-কোনো জায়গা থেকে পুজোর আওয়াজ শুনতে পাবে।’
‘সবাই খুশি।’
ইতিমধ্যে যিছিল দামা পোটরাজের বাড়ির সামনে পৌঁছোয়। ঢাক বাজছে, ঘণ্টা বাজছে, গান হচ্ছে। দেবীর পূজা সেরে মিছিল ফিরছে। ভক্তেরা উল্লাসে চেঁচিয়ে ও… উল্লাসের চীৎকার শুনে দামার হাতে পায়ে বল ফিরে আসে। তার মনে হয় ফের শরীরে রক্ত চলাচল শুরু হলো। উঠে সে আস্তে-আস্তে দরজায় এসে দাঁড়ায়। দরজার কাঠে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। পুরো মিছিলটা এখন তার বাড়ির সামনে। নারী-পুরুষের কণ্ঠ থেকে নিঃসৃত হয় উল্লাসধ্বনি: ‘মারী-আই কি জয়! দামা পোটরাজ কি জয়!’
সেই চীৎকারে দামার মুখ আলো হ’য়ে যায়। তারপর মিছিল থেকে একজন এগিয়ে এসে তার গলায় হলুদ ফুলের মালা পরিয়ে দেয়, আর আবার সকলে তার নামে জয়ধ্বনি দেয়- ‘দামা পোটরাজ কি জয়!’ © www.wbnotes.in
আনন্দও দরজায় এসে দাঁড়িয়েছিলো। অন্যমনস্কভাবে সে মিছিলটাকে লক্ষ করে। তার মুখ শক্ত হ’য়ে যায়। মিছিল গাঁয়ের দিকে এগোয়। দামা ঘরে ঢুকে আসে। দূরপত বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকে। তার মুখ থেকে আলো ঠিকরে পড়ছে। আনন্দ মায়ের কাছে এসে ফিশফিশ ক’রে বলে, ‘মা, মারী-আই-কে আমি গাঁয়ের ধারে রেখে এসেছি।’
চমকে ওঠে দুরপত, গভীর আতঙ্কে জিগেশ করে: ‘সত্যি? সত্যি করেছিস নাকি, বাবা?’
‘হ্যাঁ, মা। মিছিলকে গাঁয়ের ধারে নিতেই হবে, তাই না?’
আনন্দর কথা শুনে ঘুরপতের মাথা নেমে আসে। পা কাঁপে। ছেলেকে হঠাৎ কাছে টেনে কাঁপা-কাঁপা গলায় বলে, ‘আনন্দ, ভুলিস না। কাউকে কখনো বলবি না, আমার মাথার দিব্যি। কাউকে না।’ এই ব’লে তাকে আবার জড়িয়ে ধরে।
এবারে হাসে আনন্দ।
তার সঙ্গে কবিতার MCQ তথা দ্বাদশ শ্রেণির তৃতীয় সেমিস্টার বাংলা অধ্যায়ভিত্তিক MCQ প্রশ্নের উত্তর দেখতে নিম্নের লিঙ্কটি অনুসরণ করতে হবে