ভাবসম্প্রসারণ । নবম শ্রেণির বাংলা
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য WBNOTES.IN ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে ভাবসম্প্রসারণ । নবম শ্রেণির বাংলা প্রদান করা হলো। শিক্ষার্থীরা এই পেজে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভাবসম্প্রসারণ পড়তে পারবে। শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ যে, তোমরা ভাবসম্প্রসারণগুলি মুখস্থ করার পরিবর্তে আত্মস্থ করার প্রচেষ্টা করবে।
ভাবসম্প্রসারণ । নবম শ্রেণির বাংলা :
ভাবসম্প্রসারণ লেখার পদ্ধতিঃ
কোনো কাব্য কিংবা কবিতাংশে অনেক সময় বিপুল তাৎপর্য নিহিত থাকে। কবি সাহিত্যিকের রচনার কোনো অংশ কিংবা লোকমুখে প্রচলিত প্রবাদ-প্রবচনে লুকিয়ে থাকে গভীর জীবন সত্য। এ ধরনের ভাববস্তু বা জীবন সত্যকে কিছুটা বিস্তৃত করে দেখার নাম ভাবসম্প্রসারণ।
ভাবসম্প্রসারণ করার সময় যেসকল বিষয়গুলি লক্ষ্য রাখতে হবে সেগুলি নিম্নরূপ-
- উদ্ধৃত অংশ বারবার মনোযোগ দিয়ে পড়ে তার ভেতরের ভাবটি বুঝতে চেষ্টা করবে। মূলভাবের সংকেত উদ্ধৃতির কোন অংশে নিহিত রয়েছে, তা খুঁজে বের করতে পারলে ভাববস্তু বোঝা সহজ হয়। উদ্ধৃত অংশে সাধারণত মূলভাব একটিই হয়ে থাকে। তাই সেই ভাবটি বুঝে নিয়ে সেটির সম্প্রসারণ করবে।
- ভাবসম্প্রসারণ অনুশীলন করার সময় অভিধান দেখে অপরিচিত শব্দের অর্থ জেনে নেওয়া উচিত।
- ভাবসম্প্রসারণের দৈর্ঘ্য সম্বন্ধে ধরাবাধা নিয়ম নেই। তবে তা প্রবন্ধের মতো বড়ো কিংবা সারমর্মের মতো ছোটো হয় না। ভাবসম্প্রসারণের বাক্য সংখ্যা ১০টির কম ও ১৫-১৬টির বেশি না হওয়াই ভালো।
- মূলভাবটি সহজ-সরল ভাষায় সম্প্রসারিত করবে। একই ধরনের কথা বার বার লিখবে না। অন্য কোনো নতুন ভাববার কথা যেন এসে না যায়, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখবে।
- উদ্ধৃত অংশে কোনো উপমা বা রূপক থাকলে তার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে।
- ভাবসম্প্রসারণ লেখার সময় কোনোরকম শিরোনাম দেওয়ার দরকার পড়ে না। লেখকের বা কবির নামও উল্লেখ করতে হয় না। কিংবা ব্যাখ্যার মতো ‘কবি বলেছেন’ ধরনের বাক্যাংশ ব্যবহার করতে হয় না।
ভাবসম্প্রসারণের জন্য দেওয়া অংশটিতে সাধারণত প্রকাশ্য বক্তব্যের আড়ালে গভীর ভাবসত্তা লুকিয়ে থাকে। যেমনঃ ‘সবুরে মেওয়া ফলে’ কথাটির আক্ষরিক অর্থ গাছের ফল পেতে হলে অপেক্ষা করাতে হয়। কিন্তু এর গভীর ভাবসত্য হলো জীবনে সাফল্য অর্জন করতে হলে চাই ধৈর্য্য, প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম। ভাবসম্প্রসারণ করার সময় প্রথমে প্রকাশ্য বা আক্ষরিক অর্থের দিকটি বলে পরে অন্তনিহিত ভাবটি বর্ণনা করতে হয়।
শিক্ষার্থীদের জন্য নিম্নে কিছু ভাবসম্প্রসারণ প্রদান করা হলো :
পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না
পরের জন্য তোমার হৃদয় কুসুমকে প্রস্ফুটিত করিও।
ভাবসম্প্রসারণ :
পরের উপকারের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেওয়াই হচ্ছে জীবনের সার্থকতা। ফুলের মতোই মানুষের জীবন। পুষ্প কিন্তু নিজের জন্য ফোটে না তার কাজ হচ্ছে নিজের সৌন্দর্য ও সুবাস অন্যদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া। এভাবে সে নিজের সার্থকতা খুঁজে পায়। তদ্রুপ অপরের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারলেই জীবন সুখময় এবং আনন্দময় হয়ে উঠে। সেখানেই জীবনের প্রকৃত সুখ।
মহান সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীর সব বস্তুকে অন্যের উপকারের জন্য সৃষ্টি করেছেন। অপরের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করার মধ্যে রয়েছে মানব জীবনের প্রকৃত সার্থকতা। মানুষ অপরের মঙ্গলের জন্য নিজের প্রচেষ্টা নিয়োজিত করলে তাতে তার মহান চরিত্রের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। ফুলকে এখানে রূপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে।
ফুলের সৌন্দর্য ও ঘ্রাণ কিছুই নিজের জন্য নয়। অন্যের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মধ্যেই ফুলের সার্থকতা। এভাবে নিজেকে বিলিয়ে যখন ফুলের জীবনের অবসান ঘটে তখন উজাড় করা ভালোবাসা মানুষের স্মৃতিতে অম্লান হয়ে থাকে। পৃথিবীতে যারা মহৎ ব্যক্তি তারা অন্যের উপকারে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। ফুল এবং মহৎ ব্যক্তি আদর্শের প্রতীক। অপরের জন্য জীবন উৎসর্গ কখনও জীবনের সমাপ্তি নয়, বরং তা জীবনের সার্থকতা। ‘বিশ্বমানবতাকে উদার হৃদয়ে গ্রহণ করে মানুষের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেয়াই মানুষের নীতি হওয়া উচিত।’
মানুষের জীবনও অনেকটা ফুলের মত। মানুষের চারিত্রিক মাধুর্য হ ওয়া উচিত ফুলের মত সুন্দরও সুরভিত। ফুলের মতোই তা নিবেদিত হওয়া উচিত। পরের জন্য সমাজের স্বার্থে মানুষ শুধু ভোগবিলাস স্বার্থের জন্যই জন্মগ্রহণ করেন পরের কল্যাণে জীবনকে উৎসর্গ করার মাঝেই তাদের জীবনের চরম সার্থকতা। সব মানুষ যেদিন ফুলের আদর্শ ভেবে পরের কল্যাণে জীবনকে বিলিয়ে দিতে পারবে সেই দিনই সমাজ জীবনে দুঃখ যন্ত্রণা অবসান ঘটবে মানুষের জীবন হয়ে উঠুক আনন্দময় কল্যাণময়।
মানুষ যেদিন ফুলের আদর্শ ভেবে পরের কল্যাণে জীবনকে বিলিয়ে দিতে পারবে সেদিনই সমাজ জীবনে দুঃখ যন্ত্রণা বৈষম্যের অবসান হবে। মানুষের জীবন হয়ে উঠবে আনন্দময় ও কল্যাণময় তাই মানুষকে ব্যক্তি স্বার্থের কথা না ভেবে সবার স্বার্থের কথা ভাবতে হবে।
আলোচনায় আমরা পরিশেষে বলতে পারি যে, মানুষ যদি নিজের জন্ম লাভের মূল উদ্দেশ্য নিজেকে পুষ্পের মত বিকশিত করা মনে করে এবং স্বীয় স্বার্থ সামর্থ্য অনুযায়ী কল্যাণকর কাজের মাধ্যমে বিশ্ব মানবের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে তাহলেই মানব জীবনের যথার্থ সার্থকতা হয়। ফুল যেমন সুগন্ধ ছড়িয়ে মানুষের মনকে আমোদিত করে। মানুষও তেমনি পরের দুঃখ দূর করার জন্য , পরের মন জয় করার জন্য সাধনায় আত্মনিয়োগ করবে তাতেই জীবনের সার্থকতা পরিচয় পাওয়া যাবে।
অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে,
তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে।
ভাবসম্প্রসারণ :
সমাজকে যারা শোষণ করে,ব্যাক্তি অধিকারকে হরণ করে,দেশের আইনশৃঙ্খলা মানেনা তারা নিঃসন্দেহে অপরাধী।অপরাধের মাত্রা অনুসারে অপরাধীর বিচার করা হয়।সেই মতো সে শাস্তি পায়।এই বিচার ব্যবস্থায় শুধুমাত্র অপরাধীই দণ্ড যোগ্য বলে বিবেচিত।প্রশ্ন এখানেই,অপরাধের পাপ কি শুধু অপরাধীর।অন্যায়কে যারা দিনের পর দিন মুখ বুজে সহ্য করে,তারাও কি পরোক্ষভাবে পাপকে প্রশ্রয় দিয়ে থাকেনা,এই মৌল প্রশ্নই এখানে তুলে ধরা হয়েছে।
মানবসমাজ ভীষণ বিচিত্র। মুষ্টিমেয় মানুষের মধ্যে রয়েছে অপরাধ প্রবণতা,তেমনই সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের রয়েছে অন্যায়কে মেনে নিয়ে চলার মানসিকতা।এমন মানসিকতার জন্য ক্ষমাশীলতা,কতখানি ঔদার্য,আর কতখানি সহনশক্তি প্রয়োজন তা পরিমাপ করা দুঃসাধ্য ব্যাপার।নিজেকে অপরাধীর থেকে দূরে সরিয়ে রাখাকে মানুষ সততা বলে মনে করে।মানুষের এধরনের মানসিকতায় পরোক্ষ ভাবে অপরাধীদের সাহস জুগিয়েছে।
সাধারণ স্বার্থ ভীরু মানুষ চোখের সামনে ঘটে চলা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠতে ভয় পায়।যার ফলে দিন দিন অপরাধের মাত্রা বেড়েই চলেছে।আমাদের সমাজে অন্যায়কারী ঘৃণিত হলেও সেই সহ্য করা মানুষ গুলো ঘৃণিত বলে বিবেচিত হয় না।মানুষের ন্যায় অন্যায় সম্পর্কে এধরনের চেতনাও সম্পূর্ণ ভ্রান্ত।
অন্যায়কারীর মতো অন্যায় সহ্যকারীরাও সম অপরাধে অপরাধী।কবি কল্পনা করেছেন,বিশ্ব বিধাতার কাছে ঘৃণার রুদ্র রোষানলে অন্যায়কারীর মতো অন্যায় সহ্যকারীরাও বিশুষ্ক তৃণের মতো ভস্মীভূত।মানব সমাজের স্থূল বিচারে অন্যায় সহ্য যারা করে চলেছে তারা নিরপরাধী প্রমাণিত হলেও নিখিল বিশ্ব মানবতার দরবারে তাদের অপরাধের কোনো রেহাই নেই।
স্বার্থমগ্ন যেজন বিমুখ
বৃহৎ জগৎ হতে সে কখনও শেখেনি বাঁচিতে।
ভাবসম্প্রসারণ :
পশুদের বেঁচে থাকার সঙ্গে মানুষের বেঁচে থাকার সংজ্ঞা মেলে না। বেশিরভাগ মানুষ স্বার্থপর, নিজের স্বার্থ চরিতার্থ হলেই তারা খুশি।
নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য যে-ব্যক্তি সদা ব্যস্ত, বৃহৎ জগৎ থেকে সে স্বভাবতই বিচ্ছিন্ন। নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে সংকীর্ণ গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখলেও, আদৌ কিন্তু সে বাঁচতে শেখেনি। বাঁচা বলতে এখানে বলা হয়েছে মানুষের মতো বাঁচা, সকলকে নিয়ে বাঁচা। এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে নিজ সুখস্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে আত্মকেন্দ্রিক হয়ে ভোগবিলাসের মধ্যে কালযাপন করাকে বাঁচা বলে না। মানুষের মতো বাঁচতে হলে মানুষের উপযুক্ত আচার-আচরণ, কর্তব্য-কর্ম, দায়-দায়িত্ব বোধের পরিচয় দিতে হয়। আপন পরিবারের সীমায়িত জগৎ বড়ো সংকীর্ণ; পরিবারের বাইরে যে সমাজ, দেশ ও জাতি রয়েছে—সেই জগৎ হল বৃহৎ জগৎ।
মানুষ হিসেবে শুধু আত্মসুখে মগ্ন থাকলে চলে না; অন্যের কথাও ভাবতে হয়; অপরের সুখে-দুঃখে, আপদে-বিপদে, হাসি-কান্নায় সহমর্মী হতে হয়। বৃহত্তর জগতে মানবসমাজের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করে নিতে হয়। আর, এখানেই মানুষের সঙ্গে অন্যান্য প্রাণীর পার্থক্য। মানবিক গুণাবলির প্রকাশ এবং স্বার্থত্যাগের মাধ্যমেই মানুষ আজ উন্নতির শীর্ষে আরোহণ করতে পেরেছে। অন্যের জন্য কিছু করতে পারা বা মহত্তর কোনো কাজে আত্মনিয়োগ করতে পারার মধ্যে থাকে এক অনাবিল আনন্দ ও প্রশান্তি। তাই বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন মহাপুরুষ আর্তের সেবায়, সমাজের কল্যাণে, দেশের হিতসাধনে নিজেকে নিযুক্ত রেখে পরম প্রশান্তি লাভ করেছেন এবং সংকীর্ণ হীনস্বার্থ বিজড়িত জগতকে অতিক্রম করে বৃহত্তর জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। তাই তাঁরা হয়েছেন চিরকালের ও চিরযুগের নমস্য এবং শ্রদ্ধেয়।
সমষ্টিগত ও যূথবদ্ধ জীবনের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে মানবজীবনের সত্যিকারের মূল্য এবং সার্থকতা।
জীবে প্রেম করে যেই জন
সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।
ভাবসম্প্রসারণ :
ঈশ্বর সৃষ্ট এই জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ জীব হল মানুষ। স্রষ্টার সৃষ্টির মধ্যেই বিরাজিত তিনি, অর্থাৎ ঈশ্বর। মানুষ ঈশ্বর সাধনায় জপতপ, মন্ত্রতন্ত্র, পূজার্চনাসহ নানা ধর্মকেন্দ্রিক আচার ও পথ অবলম্বন করে থাকে। আচারসর্বস্বতাকে অবলম্বন করে মানুষ শুচি বসন পরে ঈশ্বর আরাধনায় ব্রতী হয়। কিন্তু তারা বোঝেনা যে, ঈশ্বর সাধনার এরূপ পথে ভগবানের সাক্ষাৎ লাভ কখনও সম্ভবপর নয়। সমগ্র বিশ্বে ঈশ্বর ভজনার নানান উপায় ও আয়োজন পরিলক্ষিত হয়। মঠ-মন্দির-গির্জা-মসজিদসহ নানান আরাধনা স্থলে ভগবত্তজনায় মানুষ ব্যস্ত। সাধারণ গৃহী মানুষ থেকে শুরু করে সাধক বা সন্ন্যাসী সকলেই ভগবৎসাধনায় নিরত আছে।
কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করতে হলে ভজন-পূজনসাধনা-আরাধনা ছেড়ে মানুষের সেবা করলেই যথেষ্ট। কেন-না, জীবের মধ্যেই শিবের উপস্থিতি। ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান এবং সর্বজীবেই তাঁর অধিষ্ঠান। যেহেতু তিনি স্রষ্টা তাই সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে তাঁর চির উপস্থিতি। যক্ষ-নর-গন্ধর্ব-কীটপতঙ্গ সবকিছুর মধ্যে যখন ঈশ্বরের অবস্থান তখন তাদের সেবার মধ্যেই ঈশ্বরকে অনুভব করা যায়। আর্ত-পীড়িত-অভাগা -গরিব-হীনবল-পতিত মানুষের অন্তরে মনোবল ফিরিয়ে তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারলেই ঈশ্বর সন্তুষ্ট হন। ধর্মের নামে মানুষ এক ধরনের কূপমণ্ডূকতা নিয়ে, সেবার মনোবৃত্তিকে পঙ্গু করে স্থবিরতার পঙ্কে নিমজ্জিত করেছে। তাই মানবকল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারলেই দেশ ও জাতির মঙ্গল বিধান হতে পারে।
এ জগতে হায়, সেই বেশি চায় আছে যার ভুরি ভুরি।
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।
ভাবসম্প্রসারণ :
মানুষের আকাঙ্খার অন্ত নেই। যত পায় ততই তার পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বেড়ে চলে। লালসায় মগ্ন মানুষ শুধু ‘দুই বিঘা জমি’ অর্থাৎ সামান্য কিছুতেই তৃপ্ত হয় না। জামিদার হলে তার ইচ্ছে হয় জায়গীরদার হতে, জায়গীরদারের ইচ্ছা হয় রাজা হতে, রাজার ইচ্ছে হয় সাম্রাজ্যের মালিক হতে।
বিত্তবান মানুষ প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে তার বিত্ত বাড়িয়ে চলে। বিত্ত বাড়াবার আকাঙ্ক্ষায় সে দুর্বলের উপর আঘাত হানে, তাকে শোষণ করে, পীড়ন করে সর্বস্ব কেড়ে নেয় আর এভাবেই সমাজে কিছু মানুষের হাতে সমস্ত ঐশ্বর্য সম্পদ গচ্ছিত হয়। যুগে যুগে দেশে দেশে কাঙালের সব ধন চুরি যাওয়ার ঘটনা ঘটে চলে। আসলে মানুষের লালসা বল্গাহীন অশ্বের মতো, সে যেন স্ফুলিঙ্গর মতোই ক্রমে ক্রমে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে দাবাগ্নির সৃষ্টি করে।
লালসার এই ভয়ংকর রুপ শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ চিরকালই লক্ষ করেছেন। তাই লালসাকে প্রাপ্তির দ্বারা নিবৃত্তি করবার পথ পরিহার করতে বলেছেন তারা। ত্যাগ ও বৈরাগ্যের পথই হল সেই পথ, কারণ প্রাপ্তিতে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বাড়তেই থাকে, অন্যদিকে বৈরাগ্য বা ত্যাগ লালসা ক্রমশই বিনষ্ট হয়।
উত্তম নিসচিন্তে চলে অধমের সাথে,
তিনিই মধ্যম যিনি চলেন তফাতে।
ভাবসম্প্রসারণ :
বিচিত্র ধরনের, বিচিত্র মানসিকতাসম্পন্ন মানুষকে নিয়েই তৈরি হয়েছে আমাদের মানবসমাজ। মানসিকতার বিচারে এসব মানুষের মধ্যে কেউ হলেন উত্তম, কেউ-বা অধম, আবার কেউ-বা মধ্যম।
এই তিন ধরনের মানুষের মধ্যে একটি চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়, যে মানুষ শ্রেষ্ঠগুণাবলির অধিকারী, শ্রেণির বিচারে তিনি উত্তম; তিনি বাকি দুই ধরনের মানুষের সঙ্গেই সাবলীলভাবে মিশে যেতে পারেন। গুণহীন অধমের সঙ্গে মিশলেও উত্তম মানুষের গৌরব এতটুকু হ্রাস পায় না। পাশাপাশি মধ্যম মানের মানুষেরা প্রকৃতিগতভাবে একটু স্বতন্ত্র। উদারতার পক্ষপাতী এরা নন, তাই উত্তম মানুষের মতো উদার বা মহানুভব হতে পারেন না।
একদিকে যেমন উত্তম মানুষদের থেকে খানিকটা তফাতে থাকতেই এঁরা পছন্দ করেন, অন্যদিকে সমাজের অজ্ঞ-অশিক্ষিত শ্রেণির মানুষদের তাচ্ছিল্যের সঙ্গে দূরে সরিয়ে রাখাটাই এঁদের অভ্যাস। মধ্যম শ্রেণির বা মধ্যম মানের মানুষদের সংকীর্ণ অসমদর্শিতা মানবিকতা বা মনুষ্যত্বের পরিচায়ক নয়।
আমাদেরও এই সত্য অনুধাবণ করে জীবন পথে অগ্রসর হতে হবে। মধ্যম মানের সংকীর্ণতা অতিক্রম করেই ‘আপন হতে বাহির হয়ে’ বাইরের জগতের মুখোমুখি হতে হবে।
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়
পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।
ভাবসম্প্রসারণ :
ক্ষুধার্ত ব্যক্তির কাছে পৃথিবীর সবকিছু তুচ্ছ। সৌন্দর্য, ভালােবাসা, অনুভূতি কোনাে কিছুর মূল্যই নেই তার কাছে। খাদ্য ছাড়া কোনাে মানুষ বা প্রাণী বাঁচতে পারে না। প্রত্যেক মানুষের মৌলিক প্রয়ােজন হলাে তার খাদ্য। মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য দিনরাত কাজ করে। যদি কেউ তার ক্ষুধা নিবৃত্ত করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে যে-কোনাে নিচু কাজ করতে সে বাধ্য হয়। যে ব্যক্তি ক্ষুধার্ত তার কাছে নীতি নৈতিকতা অর্থহীন। মানুষ ক্ষুর্ধাত থাকলে তার কাছে প্রেম, প্রীতি, ভালােবাসা কিছুই ভালাে লাগে না। যে মানুষ ক্ষুধাতুর তার মনে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কোনাে অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে না। পেটে ক্ষুধা থাকলে বাইরের জগতের সৌন্দর্য তার কাছে অর্থহীন ও উপহাসব্যঞ্জক মনে হয়। যার অভাব নেই, অন্নচিন্তা নেই, ঐশ্বর্য আর সচ্ছলতায় যার জীবন নির্বিঘ্ন, তার কাছে আকাশের চাঁদ, ফুল, পাখি, নদী নানা কল্পিতরূপে ফুটে ওঠে। সুখী মানুষের কাছে পৃথিবী তাই কাব্যময়। অন্যদিকে রূঢ় বাস্তবের আঘাতে যাদের জীবন বিপন্ন, দুমুঠো অন্নসংস্থানের জন্য যাদের জীবন বিপর্যস্ত, তাদের কাছে পৃথিবী অত্যন্ত কর্কশ ও কঠিন। তাই আকাশের চাঁদ দেখে তাদের মনে পড়ে না প্রিয়ার মুখচ্ছবি, অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই জঠরের জ্বালায় তখন তাদের মনে পড়ে চাঁদের মতাে গােল একখানা রুটি। কেননা রুটি ক্ষুধা নিবৃত্তি করে। তাই তার রুটির ভাবনায় পদ্য রচনার মতাে স্পৃহা থাকে না। ক্ষুধা লাগলে মানুষ আত্মমর্যাদা ভুলে যায়। নির্দ্বিধায় একজনের কাছ থেকে ছিনতাই করে কিছু আহারের ব্যবস্থা করে। তাই বলা যায়, “Hunger is the best sauce.”
ক্ষুধার্ত ব্যক্তি যেদিকেই তাকাবে, তার কেবল খাদ্যের কথাই মনে পড়বে। তার কাছে সবকিছুই মূল্যহীন-কেবল খাদ্য ব্যতীত।
দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি
সত্য বলে আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি।
ভাবসম্প্রসারণ :
মানুষের জীবনে সত্য মিথ্যা ভালো-মন্দ একত্রে জড়িয়ে আছে। একটিকে ছাড়া অপরটিকে যথাযথ উপলব্ধি করে যায় না। মিথ্যাকে পরিহার করে সত্যকে আঁকড়ে ধরেই জীবনের সার্থকতা প্রতিপন্ন করতে হয়।
সত্যকে সহজে পাওয়ার ও চেনার কোন পথ নেই। জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সত্য-মিথ্যা কে চিনে নেওয়া যায়। ভুল বা মিথ্যা মানবজীবনের অনিবার্য একটি ঘটনা। তাকে স্বীকার করেই তাকে অতিক্রম করতে হয়।
সংসারের সত্য ও মিথ্যা, সুন্দর ও অসুন্দর একই সাথে বিরাজ করে। মিথ্যা ও অসুন্দরকে প্রত্যাখ্যানের জন্য দ্বার বন্ধ করে বসে থাকলে চলবে না। দ্বার বন্ধ করে সংসার বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকলে সত্য ও মিথ্যা উভয় থেকেই বিচ্ছিন্ন হতে হয়।
বাস্তব জীবনের জটিল পথে সত্য ও মিথ্যা দুই-ই এসে দাঁড়াবে। মানুষকে তার বিবেক ও বুদ্ধি খাটিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয় সে কোনটাকে গ্রহণ করবে। এই জটিল জীবন পথে ভুলভ্রান্তি আসাও স্বাভাবিক। কিন্তু ভুলকেই শেষ মনে করলে চলবে না। ভুলের বন্ধুর পথ অতিক্রম করেই সাফল্যের সোনালী দিগন্তে পৌঁছা যায়।
রাত্রে যদি সূর্য শোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে, শুধু ব্যর্থ হয় তারা।
ভাবসম্প্রসারণ :
সময় চক্রবৎ পরিবর্তনশীল। যে সময় আসে এবং যে সময়ে ফিরে চলে যায়, তার যাওয়া আসার নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা কোনো প্রাণীর থাকে না। তাই গভীর রাতে সূর্যের কথা ভেবে তার উপস্থিতিকে প্রকট করা সম্ভব নয়। ঠিক তেমন দিনের আলোয় নক্ষত্রের সমাবেশ ঠিক যেন পাগলের প্রলাপ।
সময় চাকা ঘূর্ণনশীল আমরা জানি। দিনের পরে যেমন রাত আসে, ঠিক তেমনই রাতের পরে আসে দিন। আবার দুঃখের পরে আসে সুখ, আর সুখের পরে দুঃখ। দিনের বেলা যদি না আসতো তবে রাতের মাহাত্ম্য বা প্রয়োজনীয়তা আমাদের কাছে যেমন অবোধ্য থাকতো, ঠিক তেমনি রাত আছে বলেই দিনের এত কদর। সুখ আছে বলেই দুঃখের জ্বালা আর দুঃখ আছে বলেই সুখের এত আদর।
আমরা চাইলেই সুখ দুঃখকে পৃথক করতে পারবো না। অতীতের সুখের কথা চিন্তা করে যদি বর্তমানকে বিচার করা হয়, তবে নিজের অস্তিত্বই ক্ষুন্ন হবে। জীবনকে এমন ভাবে প্রস্তুত করতে হবে যেখানে সুখ দুঃখ উভয়কেই সমানভাবে গ্রহণ করার সৎ সাহস রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, বর্তমানও একদিন অতীতে পরিণত হবে। আর তাই বর্তমানকে সুন্দর করে তুললে তবে অতীত সুন্দর হবে। কারণ অতীত আর ভবিষ্যৎ বর্তমানে ওপর নির্ভর করে। অসময়ে কোন কিছুর প্রত্যাশা মানব জীবনে হতাশা সৃষ্টি করে। সঠিক সময় সঠিক প্রত্যাশা মানুষকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দেয়।
তাই আমাদের প্রত্যেকের মনে রাখতে হবে স্মৃতি নয়, বাস্তবকে প্রাধান্য দিতে হবে। এভাবেই মানব জীবন সার্থক হয়ে উঠবে।
পথের প্রান্তে আমার তীর্থ নয়
পথের দু-ধারে আছে মোর দেবালয়।
ভাবসম্প্রসারণ :
বৈরাগ্য মানুষের জীবনকে অর্থবহ করে না। মানবসমাজকে ছেড়ে বৈরাগ্য গ্রহণে পরমারাধ্য যে জন, তাকে পাওয়া যায় না। কারণ তিনিও থাকেন মানুষের মধ্যেই।
মানুষ পরম প্রভুর বেছে নেয় অনেকেই। বৈরাগ্য সান্নিধ্য চায়। তাকে পেতে অনেকেই বেছে নেয় বৈরাগ্য। লোকালয় ছেড়ে বনে-প্রান্তরে নিঃসঙ্গ জীবন নৈরাশ্য ছাড়া আর কিছুই মানুষকে দিতে পারে না। অধরাই রয়ে যায় পরমারাধ্য প্রভু। কেননা পরম সৃষ্টিকর্তাই বৈরাগ্য চান না। তিনি মানবসমাজসহ সমগ্র সৃষ্টিজগৎকে তার পরিজন হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। প্রকৃতির মধ্যে নিজের স্বরূপ সুষমা ছড়িয়ে দিয়েছেন। মানুষের আত্মাকেই করে নিয়েছেন নিজের অদৃশ্য আসন। তাই যারা প্রকৃত জ্ঞানী তারা পরমেশ্বরকে খুঁজতে লোকালয় ছেড়ে বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ান না। মানুষে মানুষে ভালোবাসায় খুঁজে নেন ঈশ্বরের সান্নিধ্য। পরম প্রভু নিজেই বলে দিয়েছেন তাকে পাবার পথ, মুক্তির উপায়। সে কথা বুঝতে পেরেই প্রকৃত জ্ঞানীরা উচ্চারণ করেন-
মানুষের কুঁড়েঘরই আসল দেবালয়, মানুষের হৃদয়লোকই আসল দেবাসন। অতএব আমরা যারা প্রকৃত মুক্তি চাই, আধ্যাত্মিক জগতের পূর্ণতা চাই তাদের জন্য জীবন চালানোর প্রবণতা পরিত্যাগ করতে হবে। জীবনে উপভোগ করে, মানুষের হৃদয়লোকের সন্ধান করে, পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মধ্যদিয়েই পেতে হবে মুক্তির আস্বাদ। জীবের সেবা করাই যে স্রষ্টাকে পাবার একমাত্র পথ সেটা আমাদের বুঝতে হবে।
ঈশ্বরকে পেতে হলে প্রথমেই তাঁর সৃষ্টিকে ভালোবাসতে হবে। মানুষ তাঁর উৎকৃষ্ট সৃষ্টি। মানুষের সেবাই প্রকৃত উপাসনা। মানুষই শ্রেষ্ঠ দেবালয়। তাই আমাদের শিব জ্ঞানে জীবসেবার আদর্শে ব্রতী হতে হবে।
মেঘ দেখে কেউ করিস নে ভয়
আড়ালে তার সুর্য হাসে।
ভাবসম্প্রসারণ :
সুখ এবং দুঃখ নিয়েই মানুষের জীবনপ্রবাহ। সুখ-দুঃখ একই মালায় গাঁথা দু’টি ফুল। জীবনে কেবল সুখ কিংবা কেবল দুঃখ দিয়ে মানুষের ভাগ্যলিপি সাজানো নয়। জীবনে কখনো আসে দুঃখের অমানিশা, আবার সেই দুঃখের অমানিশা শেষে মাসে সুখের রাঙা প্রভাত । আবার সেই সুখও চিরস্থায়ী নয়। এভাবে দুঃখ-সুখের আবর্তনে সম্মুখে ধাবিত হচ্ছে মানুষের জীবনধারা। নিরবচ্ছিন্ন সুখ ভোগ করার সৌভাগ্য কারো নেই। তাই দুঃখ দেখে ভয় না পেয়ে দৃঢ়তা ও ধৈর্যের সঙ্গে দুঃখ উত্তরণের চেষ্টা করা উচিত। আলোকিত আকাশও কখনো কখনো মেঘে ছেয়ে যায়। ঘনকৃষ্ণ মেঘ গ্রাস করে উজ্জ্বল সূর্যটাকে। কিন্তু স্থায়ী হয় না সেই মেঘের বিস্তার। মেঘ কেটে গিয়ে একসময় সেখানে হেসে ওঠে সূর্যবৃত্ত। নিবিড় কালো অমানিশা বিলুপ্ত করে দেয় চাঁদের অস্তিত্ব। এ বিলুপ্তি সাময়িক। অন্ধকারের বুক থেকে আবার বেরিয়ে আসে জ্যোৎস্নামণ্ডিত চাঁদ। অনাবিল স্বচ্ছতা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। মানুষের জীবনও একই রকম। তা কখনো ঢাকা পড়ে দুঃখ-দৈন্য ও হতাশার মেঘ কিংবা অমানিশার অন্তরালে। দুঃখের শেষে সুখ আসে। তাই সমস্যা সংকুল জীবনে সুখ একদিন আসবেই।
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।
ভাবসম্প্রসারণ :
মানুষ একে অন্যের সাহায্য ছাড়া বাঁচতে ও চলতে পারে না। সৃষ্টির শুরুতেই মানুষ এ কথা বুঝতে পেরেছিল। পারস্পরিক সাহায্যের নিশ্চয়তা বিধানে সেদিন তারা সমাজ গড়ে তুলেছিল। মানুষ এখন সমাজ ছাড়া বাঁচতে পারে না। সমাজের প্রতিটি মানুষকে একে অন্যের সাহায্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। সে কারণে সমাজে একের মঙ্গলের জন্যে অন্যের চিন্তা করার বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে। এতে গোটা সমাজের মঙ্গল নিহিত। সবাই যদি শুধু নিজের সুখ-সুবিধায় সর্বশক্তি নিয়োগ করে , তাহলে কারো মঙ্গল হতে পারে না। অপরের মঙ্গলসাধন করতে হলে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। এ ত্যাগই আজ পৃথিবীকে এমন সুন্দর ও সুখের নিবাস করে তুলেছে। তাই নিজের স্বার্থের কথা না ভেবে সমাজের প্রতিটি লোকের কথা চিন্তা করা প্রত্যেকের একান্ত কর্তব্য। এতে কারো সুখ-সুবিধা নষ্ট হয় না, বরং প্রতিটি মানুষের সুখ-সুবিধা সুনিশ্চিত হয়। আত্মস্বার্থ ও আত্মসুখে মত্ত না হয়ে পরস্পরের মঙ্গলসাধনে নিযুক্ত হলে সামগ্রিকভাবে মানবজাতির মঙ্গল সাধিত হয়। বস্তুত অন্যের মঙ্গল কামনার মধ্যে নিজেরও কল্যাণ নিহিত। আমি যদি অন্যের মঙ্গল চাই, অন্যেরাও আমার মঙ্গল চাইবে। এভাবে পারস্পরিক সহমর্মিতা দ্বারা আমরা শান্তির পৃথিবী গড়তে পারি। অপরের হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনায় শরীক হওয়াই তো মনুষ্যত্বের পরিচয় এবং এতেই পাওয়া যায় নিবিড় আনন্দ।
কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক কে বলে তা বহুদূর,
মানুষের মাঝে স্বর্গ নরক মানুষেতে সুরাসুর।
ভাবসম্প্রসারণ :
প্রকৃতপক্ষে স্বর্গ ও নরকের অবস্থান মানুষের মধ্যেই বিরাজমান। রিপুর তাড়নায় মানুষ বিবেকহীন নরকের যন্ত্রণা সৃষ্টি করে। প্রেমময় ও কল্যাণময় আচরণ স্বর্গসুখ নিয়ে আসে।
LINK TO VIEW PDF FILE (ONLY FOR SUBSCRIBERS)
নিম্নের PDF প্রশ্নের উত্তরগুলি শুধুমাত্র আমাদের Subscribers -দের জন্য। নবম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের সাবস্ক্রিপশন নিতে যোগাযোগ করুন আমাদের সাথেঃ What’s App: 7001880232
এখানে খুব শীঘ্রই Subscribers -দের জন্য আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভাবসম্প্রসারণ যুক্ত করা হবে